ঢাকামঙ্গলবার , ২৮ জানুয়ারি ২০২৫
  • অন্যান্য

হর্নের শব্দে অতিষ্ঠ রাজধানীবাসী, স্বাস্থ্যঝুঁকিতে লাখ লাখ মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক
জানুয়ারি ২৮, ২০২৫ ৩:০৬ অপরাহ্ণ । ১১ জন

সড়কে নামলেই হর্নের বিকট শব্দে অতিষ্ঠ রাজধানীবাসী। ৫৫ ডেসিবেল সর্বোচ্চ মাত্রা হলেও ঢাকার চার নীরব এলাকার প্রত্যেকটিতেই এই মাত্রা ৮০ ডেসিবেলের কাছাকাছি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টানা উচ্চ শব্দের মধ্যে থাকায় স্বাস্থ্যঝুঁকিতে আছে এ শহরের লাখ লাখ মানুষ। জনগণ কবে সচেতন হবে, সেই অপেক্ষায় না থেকে বিদ্যমান আইনের প্রয়োগ বাড়ানোর তাগিদ তাদের।

তিলোত্তমা ঢাকার বাস্তবতা বলছে, শব্দ দূষণ রূপ নিয়েছে শব্দ সন্ত্রাসে, যার প্রধানতম কারণ অলিগলি থেকে পিচঢালা সড়ক-মহাসড়কে দাপিয়ে বেড়ানো ছোট-বড়, প্রাইভেট কিংবা পাবলিক যানবাহনের অযাচিত হর্ন।

২০০৬ সালের শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা অনুযায়ী আবাসিক, বাণিজ্যিক আর শিল্প এলাকার জন্য বেঁধে দেয়া আছে শব্দের মানমাত্রা। এর পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পাঠাগার, হাসপাতালসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করা হয়েছে নীরব এলাকা হিসেবে। ঢাকার শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে সচিবালয়, আগারগাঁও ও সম্প্রতি বিমানবন্দর এলাকাকে নীরব এলাকা ঘোষণা করেছে সরকার। তাতে কাজের কাজ হয়নি কিছুই। ঢাকার নীরব এলাকাসহ প্রায় প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টেই শব্দের মাত্রা ৭৫ ডেসিবেলের বেশি।

পথে চলতে প্রতিনিয়ত কানের ওপর এই অত্যাচারে নাজেহাল ট্রাফিকের দায়িত্ব পালনকারী পুলিশ, ক্ষুদে শিক্ষার্থী আর পথচারীরাও। চাপা আক্ষেপ প্রকাশের সময়েই যেন ধরে নিয়েছেন, এই টর্চার সেল থেকে প্রতিকার মেলা প্রায় অসম্ভব। এত এত সাইনবোর্ড আর প্রচারণার কোনো প্রভাব কি আদৌ ফেলছে গাড়ির ড্রাইভিং সিটে থাকা পেশাজীবীদের আচরণে?

চালকরা বলছেন, অটোরিকশা, রিকশাগুলো সামনে দাঁড়িয়ে থাকে। তাদেরকে সরানোর বেশির ভাগ সময় হর্ন বাজাতে হয়। এ ছাড়া সামনে গাড়ি থাকে, তখন তাকে তো আর টোকা দিয়ে বলা যায় না সাইড দেয়ার জন্য। তখন হর্ন বাজাতে হয়।

কিন্তু ট্রাফিকের দায়িত্ব পালনকারীরা বলছেন, অনেক অ্যাম্বুলেন্সে রোগী থাকে না। তারপরও হর্ন বাজিয়ে বাজিয়ে চলে যায়। আবার দেখা যায়, যানজটের কারণে গাড়ি যেতে পারছে না। তারপরও অনেকেই হর্ন বাজাতে থাকে। এতে পথচারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টানা উচ্চ শব্দের মধ্যে থাকায় কেবল বধিরতা নয়; মেজাজ খিটখিটে হওয়া, নিদ্রাহীনতা, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, মস্তিষ্কসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্যঝুঁকিতে আছে এ শহরের লাখ লাখ মানুষ।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের যুগ্ম সম্পাদক অধ্যাপক ড. আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, মাস লেভেলে মানুষের মধ্যে আইন ভঙ্গের প্রবণতা বাড়ছে। এই কারণে শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।

নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞ ডা. মো. সফিউল্ল্যাহ বলেন, মস্তিষ্কের একটা ধারণ ক্ষমতা থাকে। অতিরিক্ত চিৎকার-চেঁচামেচি করলে মস্তিষ্কে সমস্যা হয়। অনেকের হার্টে সমস্যা থাকলে অতিরিক্ত শব্দের কারণে হার্টবিট বেড়ে যায়, রক্তচাপও বেড়ে যায়।

বিদ্যমান আইন সংস্কারে কাজ চলছে জানিয়ে পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, পুলিশের হাতে দেয়া হবে আইন প্রয়োগের ক্ষমতা।

গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ঢাকার ১০টি এলাকায় লাগাতার ক্যাম্পেইন করবো। এর মধ্যে আইনটা হয়ে গেলে পুলিশকে ক্ষমতা দিলে পুলিশও জরিমানা করতে পারবে। দেড় থেকে ২ বছরের মধ্যে পরিকল্পনা করে এটাকে নিয়ন্ত্রণে আমাদেরকে আনতেই হবে। কোনো সভ্য দেশে এটা চলতে পারে না।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী, মানুষের জন্য শব্দের গ্রহণযোগ্য মাত্রা ৫৫ ডেসিবল। আর বাণিজ্যিক এলাকার জন্য ৭০ ডেসিবল।