ঢাকাশুক্রবার , ১০ জানুয়ারি ২০২৫
  • অন্যান্য

হেনলি পাসপোর্ট ইনডেক্স ২০২৫: বৈশ্বিক র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ও বিশ্লেষণ

নিজস্ব প্রতিবেদক
জানুয়ারি ১০, ২০২৫ ৩:০৩ অপরাহ্ণ । ১১ জন

বিশ্বব্যাপী পাসপোর্টের শক্তি নির্ধারণে “Henley Passport Index” একটি সুপরিচিত ও নির্ভরযোগ্য সূচক। এই সূচকটি বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের ভিসামুক্ত বা ভিসা-অন-অ্যারাইভাল সুবিধার সংখ্যা বিশ্লেষণ করে তালিকা প্রকাশ করে। ২০২৫ সালের গ্লোবাল পাসপোর্ট র্যাংকিং সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে, যা বৈশ্বিক ভ্রমণ সক্ষমতার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরেছে।

২০২৫ সালের তালিকায় শীর্ষস্থান অর্জন করেছে জাপান, সিঙ্গাপুর এবং জার্মানি। এই দেশগুলোর নাগরিকরা ১৯০টিরও বেশি দেশে ভিসামুক্ত ভ্রমণ করতে পারেন। বিশেষত, সিঙ্গাপুর এই সূচকে ধারাবাহিকভাবে উচ্চ স্থান ধরে রেখেছে, যার পেছনে রয়েছে তাদের শক্তিশালী কূটনৈতিক নেটওয়ার্ক এবং অর্থনৈতিক সাফল্য। অন্যদিকে, আফগানিস্তান, সিরিয়া এবং ইয়েমেনের মতো যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলো তালিকার নিচে রয়েছে, যেখানকার পাসপোর্টধারীরা ৩০টিরও কম দেশে ভিসামুক্ত বা সহজ ভিসা সুবিধা পান।

বাংলাদেশ এবারের সূচকে আরও পিছিয়েছে। বাংলাদেশের নাগরিকরা বর্তমানে ৪১টি দেশে ভিসামুক্ত বা ভিসা-অন-অ্যারাইভাল সুবিধা পান। ২০২৪ সালের তুলনায় একটি অবনমন হয়েছে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সত্ত্বেও আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক সম্পর্ক এবং নিরাপত্তাজনিত কারণে এই অবস্থার উন্নয়ন ঘটেনি। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশের অবস্থান পরিবর্তনে আরও শক্তিশালী কূটনৈতিক প্রচেষ্টা প্রয়োজন।

সূচকটি প্রকাশের পর অর্থনীতিবিদ এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা উল্লেখ করেছেন, একটি দেশের পাসপোর্টের শক্তি আসলে তার অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সক্ষমতার প্রতিফলন। উদাহরণস্বরূপ, জার্মানি এবং জাপানের মতো দেশগুলো তাদের স্থিতিশীল অর্থনীতি এবং বৈশ্বিক সম্পর্কের কারণে শীর্ষস্থানে রয়েছে। অন্যদিকে, উন্নয়নশীল দেশগুলো কূটনৈতিক দুর্বলতা এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে পাসপোর্ট সূচকে পেছনের সারিতে অবস্থান করছে।

বিশ্লেষণ অনুযায়ী, বাংলাদেশের পাসপোর্ট শক্তিশালী করতে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। ভিসামুক্ত দেশগুলোর সংখ্যা বাড়াতে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক উন্নয়ন করা অত্যাবশ্যক। উদাহরণস্বরূপ, ভারত, চীন এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক আরও দৃঢ় করা যেতে পারে। একই সঙ্গে, বৈশ্বিক নিরাপত্তার মানোন্নয়ন এবং দক্ষ জনশক্তি রপ্তানির মাধ্যমে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করা সম্ভব।

Henley Passport Index-এর গুরুত্ব শুধু পাসপোর্টের ভিসামুক্ত সুবিধা নির্ধারণে সীমাবদ্ধ নয়। এটি বৈশ্বিক রাজনীতি এবং অর্থনৈতিক অগ্রগতির একটি নির্দেশক হিসেবেও কাজ করে। এই সূচক থেকে বোঝা যায়, কেন উন্নত এবং স্থিতিশীল দেশগুলো শীর্ষস্থানে রয়েছে এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত বা অস্থিতিশীল দেশগুলো তালিকার নিচে।

বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের জন্য এই সূচক নতুন করে ভাবার একটি সুযোগ তৈরি করেছে। বৈশ্বিক ভ্রমণকে সহজ করতে এবং আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে বাংলাদেশের উপস্থিতি বাড়াতে সরকারের কূটনৈতিক এবং আর্থিক পরিকল্পনা পুনর্বিবেচনা করা উচিত। পাশাপাশি, দেশের অভ্যন্তরীণ উন্নয়ন, শিক্ষা এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে বাংলাদেশের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানো সম্ভব।

বিশ্বব্যাপী ভ্রমণের জন্য শক্তিশালী পাসপোর্ট শুধু নাগরিকদের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করে না, এটি দেশের মর্যাদা এবং বৈশ্বিক অবস্থানেরও প্রতিফলন। বাংলাদেশের জন্য এটি একটি চ্যালেঞ্জ হলেও, এই সূচকে উন্নতির মাধ্যমে ভবিষ্যতে দেশের সম্ভাবনা উজ্জ্বল করার সুযোগ রয়েছে।