ডলার কারসাজির দায়ে শাস্তিপ্রাপ্ত ১০ ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধানদের শর্ত সাপেক্ষে জরিমানা মওকুফ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে পরবর্তী সময়ে একই ধরনের অপরাধ না করার শর্ত উল্লেখপূর্বক তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সতর্কতাও জারি করা হয়েছে। মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালকদারের সভাপতিত্বে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের ৪৩৩তম সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
সূত্র বলছে, শাস্তি মওকুফ হওয়া ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে মার্কেন্টাইল ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, মধুমতি ব্যাংক, মিডল্যান্ড ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক ও ট্রাস্ট ব্যাংক।
গত ৩ সেপ্টেম্বর অভিযোগ জানিয়ে প্রথম চিঠি পাঠায় বাংলাদেশ ব্যাংক। মূলত বেশি দামে ডলার বেচাকেনার দায় ট্রেজারি প্রধানেরা এড়াতে পারেন না এবং ব্যাংকগুলোর ‘ব্যাখ্যা সন্তোষজনক হয়নি’ বলে প্রত্যেক ব্যাংকের ১০ জন ট্রেজারি প্রধানকে জরিমানা করার সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
শাস্তিপ্রাপ্ত এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বেশির ভাগ ট্রেজারি প্রধানের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে, তাদের ব্যাংক আমদানিকারকদের কাছে বেঁধে দেওয়া দরের চেয়ে বেশি দামে ডলার বিক্রি করেছে। তবে দু-একজন ট্রেজারি প্রধানের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ব্যাংকগুলো অতিরিক্ত দামে প্রবাসী আয় কিনেছে। ট্রেজারি বিভাগের প্রধান তো লেনদেন করে প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে। এটা নীতিনির্ধারকদের বিবেচনায় আনতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরামর্শে গত বছরের শেষ প্রান্তিক থেকে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) এবং ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন এবিবি ডলারের দাম নির্ধারণ করছে। খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে ভোগ্যপণ্য আমদানিকারক একটি গ্রুপ সম্প্রতি সরকারের উচ্চপর্যায়ে আমদানি ব্যয় উল্লেখ করে একগুচ্ছ নথিপত্র জমা দেয়। এসব নথি পরে বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠিয়ে এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়। এরপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একাধিক দল অভিযুক্ত ব্যাংকগুলোর শাখা ও প্রধান কার্যালয় পরিদর্শন করে। জানা গেছে, ব্যাংক কোম্পানি আইনের ১০৯ (৭) ধারা অনুযায়ী জরিমানা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। জরিমানার অর্থ শাস্তি ঘোষণার ১৪ দিনের মধ্যে অর্থ পরিশোধ করতে বলা হয়েছিল। ১০টি ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হলেও ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংক অবশ্য কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।