কবি যথার্থই বলেছেন। তবে সবার রক্তের রঙ লাল হলেও তা কিন্তু এক না। বিভিন্ন দাপ্তরিক কাগজে বা চিকিৎসা সেবা নিতে যে বিষয়টি বারবার আমাদের সামনে আসে তা হলো রক্তের গ্রুপ। আমরা সবাই নিজেদের রক্তের গ্রুপ জানি কিন্তু কীভাবে এই গ্রুপিং করা হয় বা এর কাজ কী তা কি জানি? চলুন জেনে নিই ব্লাড গ্রুপ আসলে কী।
ব্লাড গ্রুপ কী?
আমাদের রক্তে লোহিত কণিকার বাইরের পৃষ্ঠে অ্যান্টিজেন A ও B এর উপস্থিতি বা অনুপস্থিতির উপর ভিত্তি করে ব্লাড গ্রুপিং করা হয়। ১৯০১ সাল থেকে এই পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়ে আসছে। অ্যান্টিজেন মূলত রোগজীবাণু থেকে সুরক্ষা প্রদান করে। যাদের রক্তে অ্যান্টিজেন A উপস্থিত, তাদের ব্লাডগ্রুপ -A। এবং যাদের বক্তে অ্যান্টিজেন B বিদ্যমান, তাদের ব্লাডগ্রুপ B। আবার কারো কারো রক্তে অ্যান্টিজেন A এবং B উভয়েই উপস্থিত থাকতে পারে। তাদের ব্লাডগ্রুপকে বলা হয় AB ব্লাডগ্রুপ। মজার ব্যাপার হচ্ছে, পৃথিবীর সিংহভাগ মানুষ, অর্থাৎ ৪৫% এর রক্তে কোন প্রকার অ্যান্টিজেন পাওয়া যায় নি। এনাদের রক্তের গ্রুপ দেওয়া হয়েছে O।
AB ব্লাডগ্রুপ বেশি রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন এবং ও ব্লাডগ্রুপ কম রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন এরকম ভেবে বসবেন না যেন। অ্যান্টিজেনের মতো সুরক্ষা প্রদানকারী অপর একটি কণিকা হল অ্যান্টিবডি । প্রতিটি মানুষের রক্তরসে অ্যান্টিজেনের বিপরীত অ্যান্টিবডি পাওয়া যায়। অর্থাৎ, A ব্লাডগ্রুপের অ্যান্টিবডি B, B ব্লাডগ্রুপের অ্যান্টিবডি A, AB ব্লাডগ্রুপে অ্যান্টিবডি অনুপস্থিত এবং O ব্লাডগ্রুপে আবি উভয় অ্যান্টিবডি রয়েছে।
ব্লাডগ্রুপিংএর জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল রেসাস(Rh) ফ্যাক্টর। এটি এক প্রকার আন্টিজেন। যাদের রক্তে এই ফ্যাক্টর উপস্থিত, তাদের ব্লাডগ্রুপকে পজিটিভ(+) বলা হয় এবং যাদের রক্তে অনুপস্থিত, তাদের রক্ত নেগেটিভ(-) বলা হয়।
ব্লাডগ্রুপ কেন প্রয়োজন
ব্লাডগ্রুপ জেনে রাখার মূল কারণ হল দুর্ঘটনা বা অসুস্থতায় রক্তদানের পদ্ধতিকে নিরাপদ করা। এক গ্রুপের রক্ত অন্য গ্রুপের রক্তে মেশালে তীব্র রাসায়নিক বিক্রিয়া হয় এবং রক্ত জমাট বেঁধে মৃত্যুও হতে পারে। তাই, জরুরি প্রয়োজনে রক্তের গ্রুপ জেনে রাখা ভালো।
পৃথিবীব্যাপী রক্তের গ্রুপ
পৃথিবীর সবচেয়ে পরিচিত ব্লাডগ্রুপ হলো O+। ৪২% মানুষের ব্লাডগ্রুপ এটি। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে A+(৩১%)। B ও AB ব্লাডগ্রুপ রয়েছে ১৫% ও ৫% মানুষের। নেগেটিভ ব্লাডগ্রুপগুলো খুব একটা দেখা যায় না। O- ও A- রক্ত পৃথিবীর ৩% ও ২.৫% মানুষের। এরপরের গ্রুপটি , B- মাত্র ১% মানুষের রক্তে পাওয়া যায়। সবশেষে ০.৫% মানুষ নিয়ে রয়েছে AB- ব্লাডগ্রুপটি।
লেখক : বুয়েট শিক্ষার্থী।