ঢাকাশনিবার , ১৮ নভেম্বর ২০২৩
  • অন্যান্য

অপরিণত শিশুর চাই বিশেষ যত্ন

১৭ নভেম্বর বিশ্ব অপরিণত শিশু দিবস

পাবলিকহেলথ ডেস্ক
নভেম্বর ১৮, ২০২৩ ৪:৫২ অপরাহ্ণ । ১৬৫ জন

গত ১৭ নভেম্বর বিশ্ব জুড়ে পালিত হয়েছে অপরিণত শিশু (প্রি-ম্যাচিওর বেবি) দিবস। মায়ের গর্ভ থেকে ৩৭ সপ্তাহ পূর্ণ হওয়ার আগেই জন্ম নেওয়া শিশুকে অপরিণত বা প্রি-ম্যাচিওর শিশু বলা হয়।  যদি ৩৭ সপ্তাহ পূর্ণ হয়ে যায় এবং ৪২ সপ্তাহের মধ্যে শিশু জন্মগ্রহণ করে, তাহলে তাকে পরিণত শিশু ধরা হয়।

এই অপরিণত জন্ম নেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু কারণ থাকে শিশুটির নিজস্ব, কিছু থাকে মায়েদের কারণ। আবার কখনো কখনো মা ও শিশু দুজনের বা একজনের নিরাপত্তার কারণে শিশুটিকেই আগেই বের করে আনতে হয়।

অপরিণত শিশু সাধারণভাবে স্বল্প জন্ম ওজনের (জন্মকালীন ওজন ২৫০০ গ্রাম বা আড়াই কেজির কম) হয়ে থাকে। বাংলাদেশে প্রায় প্রতি তিন নবজাতক শিশুর মধ্যে একজন স্বল্প ওজন নিয়ে জন্ম নেয়। বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে অপরিণত নবজাতকজনিত জটিলতায় সবচেয়ে বেশি শিশু মারা যায়, বাংলাদেশ তার একটি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতি ৫ জনের মধ্যে ১টি নবজাতক শিশু অপরিণত জন্মজনিত জটিলতায় মারা যায়।

অপরিণত শিশু জন্মের কারণ

মায়ের কিছু রোগ থাকলে শিশুর সমস্যা হতে পারে। যেমন, মায়ের যদি একলামসিয়া বা অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস থাকে, তাহলে আগেই শিশুটিকে ডেলিভারি করে ফেলতে হয়।

এছাড়া শিশুর যদি হাইপক্সিয়া হয়, শিশুর যদি অক্সিজেনের ঘাটতি হয়, যদি গর্ভের মধ্যে তার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে যায়, এসব ক্ষেত্রেও শিশুকে বের করে ফেলতে হয়।

এ ছাড়া অনেক কারণ রয়েছে, যার জন্য অপরিণত শিশু প্রসব হয়ে যায়।

প্রি-ম্যাচিউর রাপচার অব মেমব্রেন। এর মানে হলো পানি ভেঙে যাওয়া। যদি ৩৭ সপ্তাহ হওয়ার আগেই মায়ের গর্ভে পানি ভেঙে যায়, তাহলে শিশুটি অপরিণত বা অপরিণত হবে।

মায়ের যদি ওজন কম থাকে, মায়ের বয়স যদি কম থাকে (১৭ বা তার নিচে) অথবা মায়ের বয়স যদি চল্লিশের ওপরে হয়, সে ক্ষেত্রেও অপরিণত শিশু হয়ে যায়।

তিন বছরের কম বিরতিতে বারবার সন্তান ধারণের ক্ষেত্রে অপরিণত শিশু জন্মের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

এছাড়া মাল্টিপল স্টেশনের ক্ষেত্রে, যেমন যমজ বা তিনটি শিশু একসঙ্গে হয়, তাহলে সে ক্ষেত্রেও অপরিণত শিশু হয়ে যায়।

এ ছাড়া মায়ের যদি আগের শিশুটি অপরিণত হয়, তাহলে পরের শিশুটি অপরিণত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

মা যদি কোনো চাপযুক্ত অবস্থায় হঠাৎ করে পড়ে, তাহলেও শিশুটি অপরিণত হতে পারে। শারীরিক চাপের কারণে সমস্যা হতে পারে। মা যদি বেশি কাজ করে, ভারী কিছু ওঠায়, তাহলেও অপরিণত শিশু হতে পারে।

মায়ের দীর্ঘমেয়াদি নানা অসুখ—বিশেষত উচ্চ রক্তচাপ (প্রি-একলাম্পসিয়া), কিডনি রোগ, হৃদরোগ, ইউটিআই এবং অপুষ্টি।

গর্ভকালীন সময়ে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ধূমপান, অ্যালকোহল ও অন্যান্য মাদকাসক্তি।

গর্ভফুলের নানা জটিল অবস্থা—প্রিভিয়া, ইনফেকশনস, স্বল্প ওজন ইত্যাদি।

এছাড়া শিশুটি যদি জন্মগতভাবেই জেনেটিক্যাল বা বংশগতিসংক্রান্ত কোনো ত্রুটি নিয়ে বেড়ে ওঠে, সেক্ষেত্রেও তার অপরিণত প্রসব হতে পারে।

অপরিণত শিশুদের বিশেষ যত্ন : ক্যাঙ্গারু মাদার কেয়ার

অপরিণত শিশুদের বিশেষ যত্ন নিতে হয়। এ ধরনের শিশুদের ইনকিউবেটরে রাখার প্রয়োজন হয়। এ ধরনের শিশুদের বিশেষ যত্নের কাজটি হাসপাতালেই করা হয়।

অপরিণত শিশুর চিকিৎসার জন্য ক্যাঙ্গারু মাদার কেয়ার (কেএমসি) একটি কার্যকরী বিজ্ঞান সম্মত পদ্ধতি। সারাদেশের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতেও অপরিণত নবজাতক শিশুর জন্য কার্যকরী কেএমসি কর্ণার স্থাপন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে অপরিণত নবজাতকের জীবন বাঁচানো সম্ভব। অপরিণত নবজাতকদের ব্যাপারে সচেতনতর পাশাপাশি গর্ভবতী মায়েদের প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারি অর্থাৎ হাসপাতালে নরমাল ডেলিভারি করার জন্য উৎসাহিত করার পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

এছাড়া এ শিশুদের যেসব যত্ন নিতে হয়, সেগুলো হলো—

  • পুরো ছয় মাস পর্যন্ত বুকের দুধ পান
  • স্বাভাবিক নিয়ম মেনে টিকা দেওয়া।
  • শিশুর দুই বছর পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত নিয়মিতভাবে শিশুর বিকাশ-বৃদ্ধি (সেরিব্রাল পালসি), দৃষ্টিশক্তি (রেটিনোপ্যাথি অব অপরিণতম্যাচিউরিটি), শ্রবণ শক্তি, আচার-আচরণ ইত্যাদির মনিটরিং।