ঢাকারবিবার , ৬ এপ্রিল ২০২৫

গারো পাহাড়ের বনে ‘পরিকল্পিত আগুনে’ হুমকিতে জীববৈচিত্র্য

নিজস্ব প্রতিবেদক
এপ্রিল ৬, ২০২৫ ৩:১৭ অপরাহ্ণ । ২১ জন

শেরপুরের ঝিনাইগাতীর গারো পাহাড়ের বনভূমির ঝরাপাতায় আগুন জ্বালিয়ে দিচ্ছেন দুর্বৃত্তরা। চৈত্রের খরতাপে শুকনো মচমচে পাতায় আগুন লেগে বনের একরের পর একর গুল্ম লতাপাতার সঙ্গে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে নতুন গজিয়ে ওঠা চারাগাছসহ কীটপতঙ্গ। এতে হুমকিতে পড়েছে বনের জীববৈচিত্র্য।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শেরপুরের ঝিনাইগাতীর সীমান্ত সড়কের দুই ধারের শাল-গজারি বাগানের ঝরাপাতায় আগুন লেগে পুড়ছে বনের গুল্ম লতাসহ ছোটছোট চারাগাছ, এমনকি উপকারি কীটপতঙ্গ পর্যন্ত মরে ছাই হয়ে যাচ্ছে। বনের ভেতর থেকে কুণ্ডুলী পাকিয়ে উঠছে ধোঁয়া। বনের এক প্রান্তে আগুন লাগার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নেভাতে থাকলে অন্যপ্রান্তে লাগিয়ে দেয়া হয়। এতে করে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নেভাতে হিমশিম খাচ্ছেন।

স্থানীয়রা জানান, পাহাড়ে আগুন দিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে রাতের অন্ধকারে বনের মূল্যবান গাছ চুরি করছে একটি চক্র। এ ছাড়া অসাধু বালু ও পাথর ব্যবসায়ীরাও অসৎ উদ্দেশে বনের ভিতর আগুন দিয়ে স্থানীয়দের মাঝে ভীতির সৃষ্টি করছে। আগুনের ঘটনায় নতুন গজিয়ে ওঠা চারাগাছ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বনের স্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং প্রাকৃতিক ভারসাম্য হুমকিতে পড়েছে। তাই বনে দুর্বৃত্তদের আগুন দেয়া প্রতিরোধ করার দাবি স্থানীয়দের।

ঝিনাইগাতীর রাংটিয়ার বাসিন্দা প্রশ্ন মারাক জানান, বনের ভিতরে এভাবে আগুন লাগিয়ে দিলে পশু-পাখি ভয়ে অন্যত্র চলে যায়। ফলে বনের স্বাভাবিক প্রাকৃতিক পরিবেশে বিঘ্ন ঘটে। দুর্বৃত্তরা যাতে বনের এই ক্ষতি করতে না পারে সে বিষয়ে বনবিভাগের আরও সোচ্চার হওয়া প্রয়োজন।

গহান্ধিগাঁও এলাকার মজিবর জানান, একটি দুষ্টচক্র বনে আগুন লাগিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে রাতের অন্ধকারে বনের গাছ কেটে নিয়ে যায়। এদের বিরুদ্ধে দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে। নয়তো বনের অস্তিত্বের সংকট দেখা দেবে।

শেরপুর নাগরিক প্ল্যাটফর্ম জন উদ্যোগের আহবায়ক আবুল কালাম আজাদ জানান, এখনই সময় এই দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করার। বনবিভাগ এবং পুলিশ প্রশাসন যদি ওই দুষ্টচক্রের বিরুদ্ধে এখনই ব্যবস্থা গ্রহণ না করে তাহলে দিন দিন বনের সুন্দর্য নষ্ট হবে। পাশাপাশি বনের জীব-জানোয়ার এই এলাকা থেকে পালিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নেবে। এতে করে আমাদের এই গারো পাহারের প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হবে।

রাংটিয়া রেঞ্জের সহকারী বন কর্মকর্তা তানবীর আহাম্মে ইমন জানান, এই অঞ্চলে প্রয়োজনের তুলনায় আমাদের জনবল অপ্রতুল। ফলে বনের স্বাভাবিক রক্ষণাবেক্ষণও আমাদের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অপর পক্ষে এভাবে প্রতিনিয়ত বনের শুকনো পাতায় আগুন দেয়া হচ্ছে। আমরা ঊর্ধ্বোতন কর্তৃপক্ষকে বিষটি জানিয়েছি এবং প্রতিনিয়ত ফায়ার সার্ভিসের সহায়তায় আগুন নেভাচ্ছি বলে জানান ওই বন কর্মকর্তা।