ঢাকারবিবার , ১৬ জুলাই ২০২৩
  • অন্যান্য

পরিবেশ সংরক্ষণে উদ্ভিদের উপলব্ধি

রতন মণ্ডল
জুলাই ১৬, ২০২৩ ৬:৪৯ পূর্বাহ্ণ । ১২৭৬ জন

উদ্ভিদ মানেই কঠিন মাটি ভেদ করে প্রাণ হীন ধরার বুকে প্রাণের সঞ্চারণ। উদ্ভিদ মানেই পৃথিবীতে প্রাণীকুলের খাদ্য যোগানে, আবাস-আশ্রয়, অক্সিজেন প্রদানে কর্মপরায়ণ। পৃথিবীতে মানুষের আগে বৃক্ষের আগমন। প্রাচীনকালে বনকে তথা বৃক্ষেকে আশ্রয় করেই মানুষের জীবনধারন। সেই থেকে বৃক্ষকে দেবতার আসনে বসিয়ে মানুষ পূজা করে এসেছে। তাই তো কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার ‘বৃক্ষবন্দনা’ বলেছেন-

অন্ধ ভূমিগর্ভ হতে শুনেছিলে সূর্যের আহ্বান

প্রাণের প্রথম জাগরণে, তুমি বৃক্ষ, আদি প্রাণ,

মানুষ ছাড়া প্রকৃতি টিকে থাকতে পারে, কিন্তু প্রকৃতি তথা গাছ ছাড়া মানুষ কোনভাবেই বাঁচতে পারে না। আবার পরিবেশে কোনো একটি জীব এককভাবে বাঁচতে পারে না। এক জীবকে তার পরিবেশের অঙ্গ হিসেবে অপর জীবের উপর নির্ভর হয়ে বেঁচে থাকতে হয়। আকাশ-বাতাস-পাহাড়-পাখী-বন্য-জন্তু-সরীসৃপ-কীটপতঙ্গ-মাছ-জলজজীব-উদ্ভিদ-সমুদ্র সবার সাথে সবার অবিচ্ছেদ সর্ম্পকে সর্ম্পীকিত। এটা এক মহা-সমাজ। মানুষ সেই মহা-সমাজেরই একটি ক্ষুদ্র অংশমাত্র। কেনো এ সম্পর্ক অবিচ্ছেদ? মহা-বিশ্বে পৃথিবী নামক এই গ্রহে ভৌতযৌগের সমন্বয়ে উৎপন্ন হয় এক জৈবযৌগ। এই জৈবযৌগই আদিমতম বা সরলতম জীবরূপ (এক কোষী)। যা হতে ক্রমশঃ ধারাবাহিক বিকাশ বির্বতনের মাধ্যমে উচ্চ হতে উচ্চতর বৃক্ষলতাদি ও প্রাণীসমূহ উৎপন্ন। জীব মাত্রই উৎপন্ন একটি সত্ত্বা। এটি কোন সৃষ্টি নয়। এভাবে প্রকৃতির সবকিছু নিয়ে পরিনত হলো জীবমন্ডল। এই জীবমন্ডলের সঙ্গে ভৌত পরিবেশের (জল, মাটি, বায়ু) সাথে ঘটে অবিরাম মিথোষ্ক্রিয়া। এই মিথোষ্ক্রিয়ায় প্রতিটি প্রাণীই পরস্পর উপর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে নির্ভরশীল।

প্রকৃতির সবকিছুই মহা-সমাজের সামগ্রিক এক সার্কিট। কোনো একটি অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হলে মহা-সমাজের বিপত্তি ঘটে। এটা প্রতিয়মান যে, মানুষ প্রকৃতি ও পরিবেশের সাথে ওত-প্রোতভাবে সর্ম্পকযুক্ত। প্রাকৃতিক এবং মানুষ্য-সৃষ্ট পরিবেশের সমষ্টিই হল মানব-পরিবেশ। মানব-পরিবেশ- ভৌত, জীব-সংক্রান্ত এবং সামাজিক শর্তসমূহের দ্বারা গঠিত। সামাজিক শর্তসমূহের বিকারে আজ আধিপাত্য প্রতিষ্ঠায় (ব্যক্তি, সমাজ, সম্প্রদায়, রাষ্ট্র কর্তৃক) প্রকৃতিকে শোষণ লুণ্ঠনের মাধ্যমে মানুষ আজ প্রকৃতি হতে বিচ্ছিন্ন।

১৭ শতকে শিল্পবিপ্লব শুরু হলে মাত্র ৪০০ বছরে যন্ত্র সভ্যতার দ্বারা প্রকৃতি ও পরিবেশের অসীম ক্ষতি করেছে। আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় এই চতুর্থ শিল্প-বিপ্লবের যুগে তা এখন চড়ম পর্যায়ে। পুঁজিবাদের ধারায় ভোগবাদের তাড়ানায় মানুষ বুদ্ধি আর বাহুবলে, কুট-কৌশলে- ব্যক্তি, সম্প্রদায় ও রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রকৃতিকে শোষণ লুন্ঠন করেই যাচ্ছে।

আত্মকেন্দ্রীক ভাবনায় প্রকৃতি পরিবেশ সংরক্ষণে আমরা উপলবদ্ধিহীন। একটা গাছ মানে শুধু কয়েক ঘনফুট কাঠ আর ফল-মূলের হিসাব কষি। কিন্তু এর বাইরে আছে আরও অনেক কিছু। শতশত পশুপাখি ছাড়াও অসংখ্য মাইক্রো ফ্লোরা ও ফোনা জন্মায় বৃক্ষকে অশ্রয় করে। এসব গাছ তাদের বাস্তু। তাদেরও প্রাকৃতিক অধিকার এসব বৃক্ষাদিসহ মাটি-জল-বাতাস। তাদের বাস্তু-চ্যুত করার অধিকার আমাদের নেই। আমাদের এই বোধটুকু থাকা দরকার যে, মানুষের অস্তিত্ত্ব বিলিন হবে এই জীবমন্ডল ছাড়া। আমাদের উপলব্ধি না থাকলেও একটি বৃক্ষ লক্ষ-কোটি বছর ধরে তা করে আসছে। এবং তার দায়িত্ব যথারীতি পালন করে আসছে।

কয়েক ঘনফুট কাঠের হিসাবে আমাদের কাছে মূল্যহীন বট-বৃক্ষ। কিন্তু তার ফলই পাখিদের সাড়া বছরের খাবার। পাখি, কাঠবিড়াল, বাঁদর আবাস আহারের জন্য বট বা ডুমুর গাছে আশ্রয় নেয়। অপরপক্ষে বটজাতীয় বৃক্ষের বংশবিস্তারে প্রয়োজন হয় পাখির। পাখির পাকস্থলিতে এদের ক্ষুদ্র বীজের শক্ত আবরন বির্দিণ করলে অঙ্কুরোদ্গমের ক্ষমতা অনেক হারে বেড়ে যায়। আবার বট বা ডুমুরের পরাগায়নের জন্য প্রয়োজন ইউপ্রিসটিনা নামক পতঙ্গের। বাংলাবটের জন্য দরকার হয় ইউপ্রিসটিনা মেসনি (Eupristina masoni), অশ্বত্থের জন্য ব্ল্যাস্টোফেগা কোয়াড্রিসেপস (Blastophaga quadriceps)।

এদের ফুলগুলো পুষ্ট হয় তখন একধরনের গন্ধ বাতাসে ভাসতে থাকে যা পতঙ্গকে আকৃষ্ট করে। কোটি কোটি বছর ধরে এসব গাছ পতঙ্গকে আবাস আহার ও বংশবিস্তারের জন্য জায়গা দেয়। অপরদিকে পতঙ্গদ্বারা পরাগায়ন ঘটিয়ে গাছের বংশবিস্তার নিশ্চিত করে। আবার স্বল্প আয়ুর এসব পতঙ্গ প্রজন্মের ধারা অব্যাহত রাখতে প্রয়োজন সাড়াবছর নিড়িবিচ্ছিন্ন আহারের নিশ্চয়তা। আর এ দায়িত্বেও সিদ্ধহস্ত ডুমুর, অশ্বত্থ, বট বৃক্ষ। এছাড়াও পাখি, কাঠবিড়ালি, বানরসহ অসংখ্য প্রাণীগুলোর সারাবছর ধরে ধারাবাহিকভাবে খাবার দিয়ে বাঁচিয়ে রাখার দ্বায়িত্ব যেন এসব গাছ উপলব্ধি করে। আর সে জন্যেই সব ডুমুর বা সব বট গাছে এক সাথে ফল ধরে না। একটা গাছের ফল শেষ হলে অন্য গাছে ধরে। কখন কোন গাছে ফল ধরবে একটি গাছের সাথে আরেকটি গাছ পারস্পারিক সমঝোতা করে নেয়।

এই জটিল প্রক্রিয়া কিভাবে ঘটে? তাদের মধ্যে কি যোগাযোগ আছে? হ্যাঁ, নিশ্চয় আছে। এটা প্রমানিত যে একটা গাছ অনেক দূরের আর একটা গাছের সাথে যোগাযোগ করতে সক্ষম। কিন্তু কিভাবে? বাতাসে ইথিলিন ছড়ানোর মাধ্যমে সংকেত আদান-প্রদান করে। আবার আমরা জানি একটা গাছের কোন শাখায়, কীটপতঙ্গের আক্রমন বা আঘাত প্রাপ্ত হলে অন্য শাখায় তা সিগন্যাল পাথওয়ের (Signal Pathway) মাধ্যমে শর্তক করে দেয় এবং আক্রান্ত অংশের প্রতিকার করে। আর অন্য গাছের সাথে কিভাবে করে?

আমরা জানি মাটিতে প্রচুর পরিমানে ছত্রাক থাকে (একটা ছত্রাক অগণ্য শাখা-প্রশাখায় নিজেকে প্রসারিত করে ছড়িয়ে থাকে বহু বহু দূর অবধি।  সুইজারল্যান্ডের একটা ছত্রাকের কথা শুনিয়েছেন- জার্মান বিখ্যাত উদ্ভিদবিজ্ঞানী পিটার উয়োলেবেন, তার পরিধি প্রায় একশ’কুড়ি একর, বয়স তার অন্তত এক হাজার বছর)। একটা গাছ তার মূলের সাথে সংযুক্ত ছত্রাকের মাইসেলিয়ামের মাধ্যমে সিগন্যাল বা বার্তা আর এক গাছের কাছে পৌঁছায়। তখন অপর গাছটি সেই মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করে। বলতে পারেন ছত্রাক কেনই বা সহয়তা করে?

এখানেও আছে আর এক পরস্পরের দেয়া নেয়ার আত্মীক সম্পর্কের যুগসূত্র বা মিথোস্ক্রিয়া। গাছ প্রচুর সূর্যালোক ও বায়ুমন্ডল হতে কার্বন ডাই অক্সাইড নিতে পারে এবং সালোক সংশ্লোষণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শর্করা খাদ্য তৈরী করে। সেই শর্করা খাদ্য গাছের মূলের মাধ্যমে মাটিতে অবস্থিত ছত্রাক মাইসেলিয়ামের মাধ্যমে গ্রহণ করে শক্তি সঞ্চার করে। অপরদিকে সেই ছত্রাক মাটি হতে ফসফরাস নাইট্রোজন শোষণ (শতকরা ৯০ ভাগ) করে ধীরে ধীরে গাছকে সরবরাহ করে যা মাইকোরাইজাল (Mycorrhizal) বলে। এসব ছত্রাকের মাইসেলিয়ামই বিভিন্ন তথ্য আদান প্রদানে নেট-ওয়ার্কের মতো কাজ করে। কয়েক হাজার প্রজাতি ছত্রাক আছে যারা গাছের সাথে অন্য গাছের তথ্য আদান প্রদানে পরস্পর সহযোগিতামূলক সর্ম্পক আছে, যা এক মিথোস্ক্রিয়া।

আবার ছত্রাক শুধু গাছের সাথেই নয় অনেক শাওলা, শৈবালের সাথেও এরকম পারষ্পারিক মঙ্গলজনক সহাবস্থান করে। পাথর কাঠ-বাঁশের উপর ছত্রাকের মতো দেখতে জন্মে একধরনের লাইকেন। আমাদের দেশে সুপারি গাছের গায়ে ছোপছোপ গোলাকার নানান ধরনের লাইকেন দেখা যায়। কালপাসি-লাইকেন কে বলা হয় ছত্রাক ও শৈবালমিশ্রিত একটি যুগ্মজীবী। এরা মিথোজীবী হিসেবে শৈবাল সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে খাদ্য তৈরী করে আর ছত্রাক শৈবালকে আশ্রয় দিয়ে চড়ম তাপমাত্রা হতে রক্ষা করে এবং জলের যোগান দেয়। আবার ম্যাকারাঙ্গা গাছ আগ্রাসী অসংখ্য পিঁপড়াকে খাদ্য দিয়ে আশ্রয় দিয়ে বসবাসের সুযোগ করে দেয়ার উপলব্ধিতেই তাদের কান্ড ফাঁপা হয়। বিনিময়ে পিঁপড়েরা গাছকে রক্ষা করে পাতা খেকু প্রাণী-কীটপতঙ্গ ও ছত্রাকের আক্রমন থেকে। ধারণা করা হয় এই মিথোজীবিতার সর্ম্পক এক কোটি বছর।  তাছাড়া বিভিন্ন ফলদ বৃক্ষ তাদের বংশ বিস্তারে পশু-পাখির দ্বারা বীজ ছড়ানো জন্যে ফলের সুস্বাদু ও উপযোগী করে বির্বতীত হয়েছে। প্রায় প্রতিটি গাছই প্রকৃতির প্রাণীকুলকে রক্ষা করতে বহু কৌশল রপ্ত করেছে।

আবার উদ্ভিদবিজ্ঞানী পিটার উয়োলেবেন তার ‘দ্য হিডেন লাইফ অব ট্রিজ’ বইয়ে গাছপালার অসংখ্য গোপন রহস্যের কথা বলেছেন। সাভানায় গবেষকদের প্রাপ্ত তথ্য উল্লেখ করে তিনি বলেছেন- আফ্রিকার সাভানায় জিরাফেরা আমব্রেলা অ্যাকেশা গাছের (আমাদের দেশের বাবুল গাছের সমগোত্রীয়) সুখাদ্য-পাতা খেতে শুরু করলেই গাছের দেহে একটা রাসায়নিক প্রতিক্রিয়া হয়। সেই বিষযুক্ত রাসায়নিক উপাদানের প্রভাবে সুখাদ্য দ্রুতই অখাদ্য হয়ে যায়। তখন নীরবে প্রাণীগুলি অন্য গাছে সরে যেতে বাধ্য হয়। কিন্তু জিরাফ আশপাশের গাছেও খেতে না পেরে প্রায় একশ গজ পথ হেঁটে আবার অন্য গাছে খেতে উদগ্রীব হয়। কয়েক মিনিটের মধ্যে আবার একই ঘটনা।

রহস্যজনক কারণ হলো- আক্রান্ত গাছ কেবল নিজেকে বাঁচায় না, অন্যদের বাঁচাতে তার শরীর থেকে ইথিলিন গ্যাসের নিঃসরণ হয়। ফলে আশপাশের একই প্রজাতির সমস্ত গাছ হাওয়ায় হাওয়ায় টের পায়, অমনি তারাও আত্ম আত্মরক্ষার তাগিদে নিজের নিজের পাতায় ওই রাসায়নিক বিষ সঞ্চারিত করে। এভাবেই বৃক্ষের উপলব্ধি ও আপদে-বিপদে পরস্পর বার্তা বিনিময়ে নিজেদের রক্ষা করে এবং জীরাফও ঘুরেবেড়ে তাদের খাবার খেয়ে জীবন ধারণ করে। প্রকৃতির অন্য প্রাণীকুলকে বাঁচিয়ে রাখার পাশাপাশি গাছ নিজেদের রক্ষার উপলব্ধিতেই তাদের মধ্যে যোগাযোগ করে।

২০০০ সালে ‘জার্নাল অব কেমিক্যাল ইকোলজি (Journal of Chemical Ecology)’ তে এক প্রকাশিত গবেষণায় জানা গেছে যে, ভূট্টা গাছ (Maize) ক্ষুধার্ত  শুঁয়াপোকার (Caterpilar) দ্বারা আক্রান্ত হলে ভূট্টা এক প্রকার উদায়ী রাসায়নিক পর্দাথ ভলিসিটিন (Volicitin) বাতাসে ছাড়ে। যার দ্বারা বোলতা (Wasps) কে আকৃষ্ট করে। এই বোলতা এসে যাতে ঐ শুঁয়াপোকাকে খেয়ে তাদের রক্ষা করে। শিম গাছের ক্ষেত্রেও শুঁয়াপোকার আক্রমন হতে রক্ষা পেতে একই প্রকার প্রতিক্রিয়া দেখো গেছে। নিজেদের রক্ষা করে পরোক্ষভাবে বোলতার আহারের ব্যবস্থা করার উপলব্ধি ভূট্টা শিম গাছ যে করে তা বলা যায়।

বৃক্ষ প্রাকৃতিক কৌশলে পতঙ্গ-পাখি-পশুদের আহার আশ্রয় দিয়ে নিজেদের রক্ষা করতে পারলেও আজ উপলব্ধিহীন মানবের কাছ হতে রক্ষা করা অসম্ভব হয়ে দাড়িয়েছে। মানুষ আত্মকেন্দ্রীকতায় বুদ্ধি-বলে কুট-কৌশলে নিরিহো বৃক্ষদের সাবাড় করছে প্রতিনিয়ত।  বছর দুই পূর্বে ঢাকার ফুসফুস খ্যাত ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মানুষের উদরপূর্তীর জন্য কর্তন করেছে অসংখ্য বৃক্ষকে। সেখানে খাবারের দোকান তৈরীর জন্য, প্রাণহীন কনক্রিটের হাটার পথ তৈরীর জন্য সেসব অগণিত গাছের শরীরে করাল করাত চালানো হয়েছে নির্দয়ভাবে।

একইভাবে গত ২০২১ সালে জুলাই মাসে চট্টগ্রামের ফুসফুস খ্যাত স্বর্গসম সিআরবি এলাকায় শতবর্ষী বৃক্ষ সাবার করে উন্নয়নের নামে হাসপাতাল তৈরীর পক্রিয়া শুরু করে। এর আগেও ২০১৯ সালে উন্নয়নের নামে রাজশাহীতে ৫৬১ টি পাখি কলোনির গাছ কাটা হয়। সেই বছর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে হল নির্মাণের অজুহাতে অসংখ্য গাছ কাটা হয়। কোন অজুহাতে আর গাছ কাটা নয় গাছের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেই বৃক্ষদের রক্ষাকরা জরুরী।

পরিবেশ সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা গাছ লক্ষ-কোটি বছর ধরে যে উপলব্ধি করে আসছে, এখনো আমরা সেই উপলব্ধি করতে পারি না। একজন মানুষ প্রতিদিন কমপক্ষে ৫৫০ লিটার অক্সিজেন গ্রহণ করে, যার সম্পূর্ণ অংশ আসে গাছ থেকে। ৩ মিনিট অক্সিজেন ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারে না। অথচ মানুষের সেই বোধটুকু যেন নেই। একটি গাছ পরিবেশ সংরক্ষণের উপলব্ধি করে যে দায়িত্ব পালন করছে, সেখানে আমরা মানুষ নিজেকে সবচেয়ে বুদ্ধিমান শ্রেষ্ঠ জীব বলে দাবী করেও তা করি না। গাছের কাছ থেকেও সে শিক্ষা নিতেও পারি না।

বর্তমানে আলোচিত ভারতের দাশর্নিক বাস্তুতন্ত্রবিদ সতীশ কুমার বলেন- “প্রকৃতি হলো শিক্ষক, এমনকি বুদ্ধের চেয়ে বড় শিক্ষক, কেন না গৌতম বুদ্ধ যে জ্ঞান আমাদের প্রদান করেছে, সে জ্ঞান তিনি প্রকৃতির কাছ থেকে অর্র্জন করেছেন”। তাই আমাদের নিজেদের অস্তিস্ত¡ রক্ষায় প্রকৃতির কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে বাস্তুতন্ত্র তথা প্রকৃতির সাথে মানব সমাজের সর্ম্পক পুনঃসংযোগ করা অত্যন্ত আবশ্যক। ব্যক্তি-সামাজিক-রাষ্ট্রিক জীবনে, পরিবেশ প্রকৃতির বিজ্ঞান, দর্শনের উপলদ্ধি- সমতাভিত্তিক উন্নয়নে অর্ন্তভুক্ত করা একান্ত জরুরী।

 

লেখক : কৃষিবীদ, কলাম লেখক ও ‘দেশিগাছ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ আন্দোলন’ এর উদ্যোক্তা।