ঢাকাবুধবার , ১ জানুয়ারি ২০২৫

বিশ্বব্যাপী বৃদ্ধি পাচ্ছে পুরুষদের বিবাহের গড় বয়স

রঞ্জন কুমার দে
জানুয়ারি ১, ২০২৫ ৩:৩০ অপরাহ্ণ । ১৪৩ জন

বিশ্বব্যাপী পুরুষদের প্রথম বিবাহের গড় বয়স নিয়ে সাম্প্রতিক একটি চমকপ্রদ গবেষণা চিত্র তুলে ধরেছে World Statistics. বিভিন্ন দেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য এই বয়সে বড় ভূমিকা রাখে। উচ্চ আয়ের দেশগুলোতে বিয়ের বয়স বৃদ্ধি পেলেও নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে এই বয়স তুলনামূলকভাবে কম।

অতীতের দিকে তাকালে দেখা যায়, পুরুষদের প্রথম বিয়ের বয়স অনেক কম ছিল। ১৮শ ও ১৯শ শতকে বেশিরভাগ গ্রামীণ সমাজে পুরুষরা খুব অল্প বয়সে বিয়ে করতেন। পরিবারের চাপে এবং কৃষি ভিত্তিক অর্থনীতির কারণে তাদের কর্মজীবন খুব তাড়াতাড়ি শুরু হতো, যা বিয়ের বয়স কমিয়ে আনতো। তবে শিল্প বিপ্লব এবং আধুনিক শিক্ষার প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে এই বয়স বৃদ্ধি পেতে থাকে।

উন্নত দেশগুলোতে, যেমন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি এবং জাপানে, পুরুষদের প্রথম বিয়ের গড় বয়স ৩০-৩৫ বছরের মধ্যে। উদাহরণস্বরূপ, জাপানে পুরুষরা সাধারণত ৩১-৩২ বছর বয়সে বিয়ে করেন। এ ক্ষেত্রে মূল কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য দীর্ঘ সময় ব্যয় করা এবং আর্থিক স্থিতিশীলতার জন্য অপেক্ষা করা।

জার্মানিতে ২০২৩ সালের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, সেখানে পুরুষদের প্রথম বিয়ের গড় বয়স ৩৪ বছর। ব্যক্তিগত স্বাধীনতা এবং ক্যারিয়ার গঠনের প্রতি জোর দেওয়ায় এই প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

আফ্রিকা এবং দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে পুরুষদের বিয়ের গড় বয়স তুলনামূলক কম। উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশে পুরুষদের গড় বিয়ের বয়স প্রায় ২৫-২৬ বছর। বিশেষ করে গ্রামীণ অঞ্চলে সামাজিক চাপ এবং পরিবারের প্রত্যাশা পুরুষদের কম বয়সে বিয়ের দিকে ঠেলে দেয়।

ভারতে, যেখানে সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের প্রভাব এখনও গভীর, পুরুষদের গড় বিয়ের বয়স ২৬-২৭ বছর। তবে শহরাঞ্চলে শিক্ষার প্রসার এবং কর্মজীবনে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধির ফলে এই বয়স ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

পুরুষদের প্রথম বিয়ের বয়স পরিবর্তনে কয়েকটি প্রধান কারণ ভূমিকা রাখে:

শিক্ষা: উচ্চশিক্ষা গ্রহণের প্রবণতা পুরুষদের বিয়ের বয়স বাড়িয়েছে।

অর্থনৈতিক স্বাধীনতা: কর্মজীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরই বিয়ের সিদ্ধান্ত নিতে চান অনেক পুরুষ।

ব্যক্তিগত পছন্দ: আধুনিক সমাজে ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ও সম্পর্ক গঠনের নতুন উপায় (যেমন অনলাইন ডেটিং) বিয়ের সময় বিলম্বিত করছে।

সামাজিক পরিবর্তন: নারী-পুরুষ সমতা এবং পরিবারের আর্থিক দায়িত্ব ভাগাভাগি করার ধারণা বিয়ের বয়সকে প্রভাবিত করছে।

বাংলাদেশে শহর ও গ্রামীণ অঞ্চলে পুরুষদের বিয়ের বয়সে বড় পার্থক্য দেখা যায়। শহরাঞ্চলে পুরুষরা সাধারণত ২৮-৩০ বছর বয়সে বিয়ে করেন, যেখানে গ্রামে এটি ২৩-২৫ বছরের মধ্যে থাকে। কর্মসংস্থানের সীমিত সুযোগ, আর্থিক চাহিদা, এবং সামাজিক চাপ এর প্রধান কারণ।

বিশ্বব্যাংকের একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের যুব সমাজে বিয়ের সিদ্ধান্তে শিক্ষার ভূমিকা ক্রমাগত বাড়ছে। এর ফলে শহরাঞ্চলে বিয়ের গড় বয়স উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

সমাজবিজ্ঞানী ড. মাইকেল কফম্যান বলেন, “পুরুষদের বিয়ের বয়স শুধু ব্যক্তিগত বিষয় নয়, এটি একটি দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার প্রতিফলন। উন্নত দেশগুলোতে যেখানে ক্যারিয়ার এবং ব্যক্তিগত লক্ষ্য গুরুত্ব পায়, সেখানে বিয়ের বয়স বেশি। অন্যদিকে, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে পারিবারিক এবং সামাজিক চাপে বয়স তুলনামূলক কম।”

জাতিসংঘের ২০২৪ সালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী পুরুষদের প্রথম বিয়ের গড় বয়স ২৯। অঞ্চলভেদে এই বয়সের তারতম্য দেখা যায়:

১. ইউরোপে: গড় বয়স ৩১-৩২।
২. এশিয়ায়: গড় বয়স ২৬-২৮।
৩. আফ্রিকায়: গড় বয়স ২৪-২৫।

পুরুষদের প্রথম বিয়ের গড় বয়স সমাজের পরিবর্তনশীল চাহিদা, অর্থনৈতিক বাস্তবতা এবং সাংস্কৃতিক প্রভাবের প্রতিফলন। উন্নত দেশগুলোতে ব্যক্তিগত স্বাধীনতা এবং ক্যারিয়ারের প্রতি গুরুত্ব এই বয়স বাড়াচ্ছে, যেখানে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সামাজিক চাপ এখনও বড় ভূমিকা রাখে। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বৈশ্বিক স্তরে বিয়ের বয়সে ক্রমশ পরিবর্তন আসছে।