শীতকালে অনেক শিশুই আকস্মিকভাবে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়। গবেষকেরা বলেন, শীতে আবহাওয়ায় কম আর্দ্রতায় রোটা ভাইরাসের বংশবৃদ্ধি হয় এবং শিশুরা আক্রান্ত হয়।
উপসর্গ দেখে বুঝুন
শীতের এই ভাইরাসজনিত ডায়রিয়ায় হঠাৎ করেই বমির সঙ্গে পাতলা ছাকড়া ছাকড়া মতো পায়খানা শুরু হয়। পায়খানা দেখতে অনেকটা কর্ন স্যুপের মতো। শিশুর পেটে ব্যথা, জ্বর থাকে না, মলের সঙ্গে রক্তও যায় না। তবে পাতলা পায়খানা সহজে বন্ধ হয় না, মায়েরা প্রস্রাব-পায়খানা আলাদা করতে পারেন না, দুটোই এক সঙ্গে চলতে থাকে। এর ফলে শরীর থেকে দ্রুতই প্রচুর পানি ও লবণ, বিশেষ করে পটাশিয়াম বেরিয়ে যায়। দ্রুতই পানি শূন্যতা, লবণশূন্যতা এমনকি কিডনি বিপর্যয়ও দেখা দিতে পারে।
করণীয় কী
১. প্রতিবার পাতলা পায়খানা হওয়ার পর ১ বছরের কম বয়সী শিশুদের ১০ থেকে ২০ চামচ, ১ বছরে বেশি বয়সী শিশুদের ২০ থেকে ৪০ চামচ সঠিকভাবে গোলানো খাওয়ার স্যালাইন খেতে দিন। এতে পানি ও লবণশূন্যতার ঝুঁকি থেকে আক্রান্ত শিশুকে বাঁচানো যাবে।
২. এর সঙ্গে মায়ের দুধ ও বড় শিশুদের পাতলা খিচুড়ি (চাল, ডাল, মাছ, মাংস দিয়ে), পাকা কলা অল্প অল্প করে খেতে দিন। বাজারের কোন পানীয়, ড্রিংকস বা খাবার দেওয়া যাবে না।
৩. যদি শিশুর প্রাণচাঞ্চল্য কম মনে হয় বা ৮ থেকে ১০ ঘন্টা প্রস্রাব না করে, তবে দ্রুত হাসপাতালে নিন।
৪. সাধারণত এতে অ্যান্টিবায়োটিকের কোনো প্রয়োজন নেই।
৫. জিংক সিরাপ চিকিৎসকের পরামর্শে নির্দিষ্ট মাত্রায় দেওয়া যায়।
৬. বার বার মলত্যাগের কারণে মলদ্বারে প্রদাহ বা ক্ষতের মতো হলে জিংক অক্সাইড ক্রিম দেওয়া যায়।
সচেতন থাকুন
একটু সচেতন থাকলেই শিশুদের শীতকালীন এই ডায়রিয়া থেকে রেহাই পাওয়া যায়।
১. শিশুদের বাজারের অস্বাস্থ্যকর অনিরাপদ খাবার খেতে দেবেন না। বাড়িতে তৈরি পুষ্টিকর খাবারে তাকে অভ্যন্ত করুন।
২. মা, বাবা ও পরিচর্যাকারীর হাত ধোয়া ও পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা দরকার।
৩. বড় শিশুদের ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা বিষয়ে শিক্ষা দিন।
৪. ৬ মাস বয়স পর্যন্ত শুধু মায়ের দুধ খাওয়ালে সেই শিশুরা এসব রোগে কম ভোগে।
৫. রোটা ভাইরাসের টিকা দেওয়া যায়, তবে দেশে বর্তমানে সরকারীভাবে এ টিকা পাওয়া যায় না।
নোট: শিশু বিশেষজ্ঞ অধ্যপক ডা: মো: আবিদ হোসেন মোল্লার লিখিত ‘শিশু স্বাস্থ্যের খুঁটিনাটি’ বই থেকে নেওয়া হয়েছে তাঁর অনুমতিক্রমে।