ঢাকাবৃহস্পতিবার , ২০ মার্চ ২০২৫

স্বাস্থ্য সুরক্ষা খাদ্যের মোড়কে ফ্রন্ট প্যাকেটে লেবেলিং নিশ্চিত জরুরি

নিজস্ব প্রতিবেদক
মার্চ ২০, ২০২৫ ৫:৫৫ অপরাহ্ণ । ৩৬ জন

অতিরিক্ত চিনি, লবন, ট্রান্সফ্যাট, হৃদরোগ, স্ট্রোক, ক্যান্সারের মতো অসংক্রামক রোগের অন্যতম কারণ। এসডিজি-র লক্ষ্য বাস্তবায়নে বাংলাদেশকে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে অসংক্রামক রোগজনিত মৃত্যু ৩০ শতাংশ কমিয়ে আনতে হবে। বাংলাদেশ সরকার খাদ্যের ফ্রন্ট প্যাকেটে লেবেলিং-এ চিনি, লবন, ট্রান্সফ্যাট পরিমাণ প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। মোড়কজাত খাদ্যে ফ্রন্ট প্যাকেটে লেবেলিং সংক্রান্ত তথ্য অসংক্রামক রোগ কমিয়ে আনতে গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা রাখবে। আলোচকরা জনস্বাস্থ্য এবং ভোক্তার অধিকার রক্ষায় ফ্রন্ট প্যাকেটে লেবেলিং সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত দ্রুত বাস্তবায়নের আহবান জানায়।

বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ ২০২৫) দুপুর ১.৩০ হতে ৪ টায় বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও সেন্টার ফর ল’ এন্ড পলিসি এফেয়ার্স-সিএলপিএ যৌথভাব সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল,বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কনফারেন্স হলে আয়োজিত সভায় এই অভিমত ব্যক্ত করা হয়।

সভায় বক্তারা বলেন, দ্রব্যের মোড়কে চিনি, লবন, ট্রান্সফ্যাট, স্যাচুরেটেড ফ্যাট ইত্যাদির মাত্রা সুপষ্টভাবে লেখা ব্যবস্থা দেয়া জরুরি। যাতে নিরক্ষর ক্রেতারাও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর পণ্য চিহ্নিত করতে পারে। খাদ্য দ্রব্যে কোন পণ্যের মাত্রা কতটুকু হবে, কিভাবে হবে এবং কোন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বাস্তবায়ন হবে তা সুস্পষ্ট করা জরুরি। এছাড়া এসকল বিধান বাস্তবায়নে নিয়মিত মনিটরিং, সমন্বয় এবং প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।

সভায় সেন্টার ফর ল এন্ড পলিসি এফেয়ার্স-র প্যাকেজিং এবং লেবেলিং গবেষণায় দেখা যায়, অতিরিক্ত চিনিযুক্ত পাণীয় এবং চিপস-র কোন ধরনের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সতর্কবাণী দেখা যায়নি। প্যাকেটে মোটিভেশনাল বিভিন্ন শব্দের উপস্থিত রয়েছে। মার্কেটিং সংক্রান্ত গবেষণায় দেখা যায় প্রায় শতভাগ দোকানে চিপস এবং অতিরিক্ত চিনিযুক্ত পাণীয়-র বিজ্ঞাপন আছে, ৭০ শতাংশ দোকানীয় অতিরিক্ত বিক্রির জন্য কমিশন পায়, ৫২ শতাংশ দোকানে ব্রান্ডে ফ্রিজ এবং ৩৬ শতাংশ দোকানী সাইনবোর্ড পেয়েছেন।

সভায় প্রধান অতিথি বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসি ড. মুজিবর রহমার হাওলাদার বলেন সুস্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা জরুরি। আমাদের দেশে রোগ বাড়ছে, তাই রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য কাজ করতে হবে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে সচেতনতার পাশাপাশি আইনীভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

সভায় ড. আতিকুর হক, চেয়ারম্যান, পাবলিক হেলথ বিভাগ, বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতিত্বের বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব ড. শিব্বির আহমেদ ওসমানী বলেন, সরকার মোড়কজাত খাবারে চিনি, লবন, ট্রান্সফ্যাট বিষয়ক তথ্য যুক্ত করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সাথে এ বিষয়ে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। ড. খালেকুজ্জামান রুমেল, বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় বলেন, গবেষণায় পাওয়া যায় অতিরিক্ত চিনিযু্ক্ত কিছু পাণীয়তে দাতের ক্ষতি হয় এমন সকল উপাদান পাওয়া গিয়েছে। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ-র সদস্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ সোয়েব বলেন, নিরাপদ খাদ্য আইন একটি শক্তিশালী আইন। এ আইনের আলোকে মোড়কজাত প্রবিধানমালা করা হয়েছে। তবে আমাদের গবেষণার দেখা যায় অনেক ব্যবসায়ী এ বিধিমালা পালণ করছে না। ফ্রন্ট প্যাকেটে লেবেলিং করার বিষয়ে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।

জনাব রুহুল কুদ্দুস গ্লোবাল হেলথ এডভোকেসী ইনকিউভেট বলেন খাদ্যের মান, মোড়ক সংক্রান্ত কার্যক্রমে ক্ষেত্রে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের নেতৃত্ব দেয়া জরুরি। ব্যারিষ্টার নিশ্চিত মাহমুদ বলেন, সংবিধানে জনস্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকার প্রদান করা হয়েছে। নিরাপদ খাদ্য মানুষের মৌলিক অধিকার। জনস্বাস্থ্য সংবাদিক ও গবেষক সুশান্ত সিনহা বলেন, নিরাপদ খাদ্য আইন বাস্তবায়নের কঠোর মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা উচিত। প্রফেসর ড. সাইদুর আরেফিন নিরাপদ খাদ্যের বিষয়ে নাগরিক সচেতনতার বৃদ্ধির জোর দেন। ডাঃ অফম সারোয়ার মোড়কের স্বাস্থ্য সর্তকবানী জনস্বাস্থ্যের বাংলাদেশের নাগরিকরা বুঝতে পারে সে অনুসারে প্রণয়নের সুপারিশ করেন।

সভায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, গ্লোবাল হেলথ এডভোকেসী ইনকিউভেট, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন অধিদপ্তর, পাবলিক হেলথ ল ইয়ার্স নেটওয়ার্ক, সিটিজেন নেটওয়ার্ক, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সাইন্স, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন, কনজুমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পাবলিক হেলথ নিউজ ২৪, ওয়ার্ক ফর বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট, ভাইটার স্ট্রাটেজিস-র, সিয়াম, মুখ, ডাস, পদ্মা, গ্রাম বাংলা, মৌমাছি, কনমস সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।