বিশ্বের অন্যতম দূষিত নগরীতে পরিণত হয়েছে ঢাকা। রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম থাকায় শিশু–কিশোরেরা দূষণজনিত বিভিন্ন রোগের ঝুঁকিতে বেশি থাকে। বর্তমানে পৃথিবীর ৯৯ শতাংশ মানুষ অস্বাস্থ্যকর ও দূষিত বাতাসের মধ্যে বাস করে। বিশ্বব্যাপী যেসব অসংক্রামক রোগে মানুষের সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়, তার বেশির ভাগেরই কারণ বায়ুদূষণ।
ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে গাড়ি, কলকারখানার ধোঁয়ায় মাঝে মাঝে মনে হয় যেন কুয়াশার আস্তরণে শহর ঢাকা পড়েছে। বায়ুদূষণ মানে যে শুধু রাস্তার গাড়ির কালো ধোঁয়া, তা কিন্তু নয়। বরং চুলার ধোঁয়া ও পরিবারের কোনো সদস্যের ধূমপানের ফলে ঘরের ভেতরেও বাচ্চারা বায়ুদূষণের ক্ষতিকর প্রভাবগুলোর সম্মুখীন হচ্ছে। দূষিত বাতাসে নাইট্রোজেন ডাই–অক্সাইড, সালফার ডাই–অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড, আরপিএম (রেসপিরেবল পার্টিকুলেট ম্যাটার), এসপিএম (সাসপেন্ডেড পার্টিকুলেট ম্যাটার)–এ ভাসমান কণার পরিমাণ এতটাই বেশি যে শিশুর সংবেদনশীল শ্বাসতন্ত্রের ক্ষতির ঝুঁকি খুব বেড়ে যায়।বাড়ন্ত শিশুর ফুসফুস ও স্নায়ুর বিকাশের জন্য দূষিত বাতাস খুবই ক্ষতিকর। ফুসফুসের মধ্যে থাকা সারফেকট্যান্ট নামের তরল পদার্থ ফুসফুসের দুটি অংশকে একসঙ্গে আটকে যেতে বা সংকুচিত হয়ে যেতে বাধা দেয়। সারফেকট্যান্ট না থাকলে শ্বাসকষ্ট হবে। দূষিত বায়ু ফুসফুসের এই তরল পদার্থ নষ্ট করে ফেলে।
এ ছাড়া শিশুদের ফুসফুস নাজুক হওয়ায় এবং প্রতিরোধক্ষমতা কম থাকায় সহজেই ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়াসহ বিভিন্ন জীবাণু আক্রান্ত করে। শিশুরা তুলনামূলকভাবে বড়দের চেয়ে বেশি দ্রুত শ্বাস নেওয়ায় তাদের ওজনের তুলনায় বেশি বাতাস গ্রহণ করে। আর দূষিত বাতাস বেশি গ্রহণ করা মানে, বেশি বেশি জীবাণু শরীরে ঢুকে পড়া।
দূষিত বাতাসে বেড়ে ওঠার কারণে শিশুরা তাৎক্ষণিক শাসতন্ত্রের প্রদাহ যেমন নিউমোনিয়া, ব্রংকিওলাইটিসে ভোগে। আবার বায়ুদূষণের কারণে অ্যাজমা, ব্রংকাইটিসসহ বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদি রোগেও আক্রান্ত হয়। কখনো কখনো এর প্রভাব বয়ে বেড়াতে হয় সারা জীবন। কোনো কোনো সমস্যা বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আরও বাড়তে থাকে।