ঢাকামঙ্গলবার , ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

চলচ্চিত্র, নাটক ও ওটিটিতে ধূমপানের দৃশ্য নিষিদ্ধের দাবি

admin
ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৫ ৭:১৩ অপরাহ্ণ । ২৫ জন

বর্তমান প্রজন্মের বিনোদনের অন্যতম জনপ্রিয় মাধ্যম ওটিটি প্ল্যাটফর্ম। সুযোগ সন্ধানী তামাক কোম্পানিগুলো তরুণ সমাজকে ধূমপানের নেশায় নেশাগ্রস্ত করার জন্য চলচ্চিত্র, নাটক এবং ওটিটি কনটেন্টে জনপ্রিয় অভিনয় শিল্পীদের দ্বারা অতিমাত্রায় ধূমপানের দৃশ্য প্রদর্শন করছে। যা বাংলাদেশ বিদ্যমান আইন ও নীতির পরিপন্থী এবং শিশু, কিশোর-তরুণদের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এজন্য চলচ্চিত্র, নাটক ও ওটিটিতে ধূমপানের দশ্য প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা জরুরি। সুনাগরিক ও স্বাস্থ্যবান জনশক্তি নিশ্চিতে এবং তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন ও ওটিটি প্ল্যাটফর্মের জন্য আলাদা গাইডলাইন প্রণয়ন করা প্রয়োজন।

আজ মঙ্গলবার ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ দুপুরে আগারগাঁও এ ফিল্ম আর্কাইভ ভবনে বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ এবং মানস- মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থা আয়োজিত ‘তরুণ প্রজন্মের সুরক্ষায় চলচ্চিত্র, নাটক এবং ওটিটি প্লাটফর্মে প্রদর্শিত কনটেন্টে ধূমপানের দৃশ্য নিয়ন্ত্রণে করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা উক্ত অভিমত ব্যক্ত করেন ।

সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ এর মহাপরিচালক মো. আবদুল জলিল। তিনি বলেন, জনগণের কল্যাণে ও জনগণকে বিনোদন দেয়ার জন্য সিনেমা তৈরি করা হয। এসব সিনেমায় ধূমপানসহ নেতিবাচক বিষয় থাকা উচিত নয়। সেন্সর বোর্ড থেকে চলচ্চিত্রের ৪টি স্তরে রেটিং সিস্টেম চালু করা হচ্ছে। ফিল্ম আর্কাইভ এর গবেষণায় তামাক নিয়ন্ত্রণ বিষয়টি যুক্ত করার পাশাপাশি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম ক্লাবের সাথে সমঝোতার মাধ্যমে ধূমপান বিরোধী জনসচেতনতা তৈরিতে কাজ করা হবে। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় চলচ্চিত্রে নেতিবাচকতা পরিহার সম্ভব হবে জানান তিনি।

মানস এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ড. অরূপরতন চৌধুর’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ এর পরিচালক ফারহানা রহমান, চলচ্চিত্র পরিচালক ও প্রযোজক রফিকুল আনোয়ার রাসেল, চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন বোর্ড সদস্য ও অভিনেত্রী কাজী নওশাবা আহমেদ, ভাইটাল স্ট্র্যাটেজিস সিনিয়র টেকনিক্যাল এডভাইজার এড. সৈয়দ মাহবুবুল আলম, টেকনিক্যাল এডভাইজার আমিনুল ইসলাম সুজন, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণলায়ের সার্চ কমিটির সদস্য সাইদুল ইসলাম খান, চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন রোর্ড এর উপ-পরিচালক মোঃ মঈনউদ্দিন, বাংলাদেশ শর্টফিল্ম ফোরামের কর্ণধার ইমরান হোসেন কিরমানী, এইড ফাউন্ডেশনের প্রকল্প পরিচালক শাগুফতা সুলতানা, টিসিআরসি’র প্রকল্প সমন্বয়কারী ফারহানা জামান লিজা প্রমুখ। সেমিনার সঞ্চালনা করেন মানসের সিনিয়র প্রজেক্ট ও কমিউনিকেশন অফিসার মো. আবু রায়হান।

প্রবন্ধ উপস্থাপনায় মানসের প্রকল্প সমন্বয়কারী উম্মে জান্নাত বলেন, ওটিটি প্ল্যাটফর্মে প্রচারিত ৬০টি নাটক-সিনেমার মধ্যে ৪৬টিতেই তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন ভঙ্গ করা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ধূমপানের দৃশ্য ছিলো নায়কের চরিত্র ৩৩টি, নায়িকার চরিত্রে ১৯, ভিলেন এর চরিত্রে ১২ এবং অন্যান্য পার্শ্ব চরিত্রে ২১ বার ধূমপানের দৃশ্য প্রদর্শন করা হয়েছে। গবেষণায় ৫টি জনপ্রিয় ওটিটি প্ল্যাটফর্মকে বাছাই করে ৬০টি নাটক, সিনেমা পর্যবেক্ষণ করা হয়। এর মধ্যে ৬টি নাটকে এবং ৪০টি সিনেমাতে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন ভঙ্গ করা হয়েছে। নেটফ্লিক্স এ প্রচারিত সিনেমায় সবচাইতে বেশি তামাক ও মাদক ব্যবহারের দৃশ্য পাওয়া যায়।

সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, শিশু, কিশোর-তরুণদের ধূমপানের নেশায় আসক্ত করছে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট কতিপয় মানুষ। কাহিনীর প্রয়োজনে ধূমপানের দৃশ্য দেখানো যাবে বলা হলেও রাষ্ট্রের স্বার্থ ও জনগণের জন্য কল্যাণ পরিপন্থী সব কিছু বর্জন করা প্রয়োজন।

অধ্যাপক ড. অরূপরতন চেীধুরী বলেন, সারা বিশ্বে তামাকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলছে। ধূমপায়ী এবং পরোক্ষভাবে অধূমপায়ীরাও ক্ষতির শিকার হয়। তামাক কোম্পানির প্রলোভনে কিশোর-তরুণদের মধ্যে ধূমপানের প্রবণতা বাড়ছে এবং তারা ভয়ঙ্কর মাদকের দিকে ধাবিত হচ্ছে। তরুণ সমাজের সুরক্ষায় বিনোদন মাধ্যমে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন যথাযথভাবে বাস্তবায়ন এবং ওটিটি’র জন্য পৃথক গাইডলাইন প্রণয়নে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।

আমিনুল ইসলাম সুজন বলেন, চলচ্চিত্রে আরো বেশি দায়িত্বশীলতা ও সৃজনশীলতা প্রয়োজন। সৃজনশীলতার নামে যেনো ক্ষতিকর কিছু দেখানো না হয়। চলচ্চিত্রে ধূমপানের দৃশ্য যেন না থাকে সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের আরো কঠোর হতে হবে। ধূমপানের দৃশ্য প্রর্দশন করা হয়েছে এমন সিনেমা যেনো অনুমোদন না দেয়া হয়।

সভায় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সার্টফিকেশন বোর্ড, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনৈতিক গবেষণা ব্যুরো, জাতীয় যক্ষা নিরোধ সমিতি (নাটাব), ডেভেলপমেন্ট এ্যাক্টিভিটিস অব সোসাইটি (ডাস) এর প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।