বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, অর্থনীতিবিদসহ স্থানীয় তামাক নিয়ন্ত্রণের কর্মী ও গবেষকদের প্রস্তাব ও চিন্তার বাইরে লাগিয়ে তামাকের কর ও মূল্য বাড়িয়ে চমক দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। চলতি অর্থবছরে দ্বিতীয় বারের মতো নজিরবিহীনভাবে সিগারেটের চার স্তরেই কর ও মূল্য বৃদ্ধি করেছে বাংলাদেশ সরকার।
বাংলাদেশে সিগারেট প্রিমিয়াম, হাই, মিডিয়াম ও লো সেগমেন্ট এই চার স্তরে বিভাজিত। এরমধ্যে ৭৭ শতাংশ সিগারেটই নিম্ন স্তরের। বহু বছর ধরে চার স্তরের মধ্যে ওপরের তিনটি স্তরের সিগারেটের কর হার একই রকম হলেও নিম্ন স্তরের সিগারেটের কর হার ছিল খুবই কম। অর্থাৎ উপরের তিন স্তরে সম্পূরক শুল্ক বা এসডি, ভ্যাট এবং হেলথ ডেভলপমেন্ট সারচার্জসহ মোট কর হার ছিল ৮১.৫ শতাংশ। অথচ সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া নিম্ন স্তরের সিগারেটে মোট কর হার ছিল ৭৬ শতাংশ। ৯ জানুয়ারি ২০২৫ জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, নিম্ন স্তরের সিগারেটের কর হার এক লাফে ৭ শতাংশ বাড়িয়েছে এবং ওপরের তিনটি স্তরে ১ দশমিক ৫ শতাংশ বৃদ্ধি করেছে। ফলে বাংলাদেশে এখন সব ধরনের সিগারেটের করের হার হয়েছে ৮৩ শতাংশ। যা দীর্ঘ দিনের দাবি ছিল তামাক নিয়ন্ত্রণের আন্দোলন কর্মীদের। একইসাথে প্রিমিয়াম, হাই, মিডিয়াম ও লো সেগমেন্টের সিগারেটের দাম বাড়িয়েছে উল্লেখযোগ্যভাবে।
রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ মুক্ত হওয়ায় জনস্বাস্থ্য রক্ষায় এনবিআর এই বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নিতে পেরেছে। এতে দাম ও কর বৃদ্ধির কারণে সিগারেটের ব্যবহার যেমন কমবে, তেমনি সিগারেট কোম্পানির মুনাফা বড় অংশে কমবে বলে বিশ্বাস করি। যা বাংলাদেশের তামাক নিয়ন্ত্রণ তথা জনস্বাস্থ্য রক্ষায় উল্লেখযোগ্য কাঠামোগত ও গুণগত পরিবর্তন। এতদিন কর হার না বাড়িয়ে শুধু দাম বাড়ানোয় সিগারেটের রাজস্ব বৃদ্ধির পাশাপাশি সিগারেট কোম্পানির মুনাফা বাড়তো। এতে সিগারেট কোম্পানিগুলো আরও সিগারেট উৎপাদনের আগ্রহী হতো এবং আগ্রাসী বিপণন করতো।
একইসাথে তারা সবোর্চ্চ খুচরা মূল্য বা এমআরপি না লিখে প্যাকেটের গায়ে আইন ভেঙ্গে খুচরা মূল্য লিখতো। আর সবোর্চ্চ খুচরা মূল্য আর খুচরা মূল্য লেখার মধ্যমে প্রতিদিন ২০০ মিলিয়ন টাকা অর্থাৎ বছর ৭০ বিলিয়ন টাকা বাড়তি নিতো দাম নিতো ভোক্তাদের কাছ থেকে। এনবিআর এই ত্রুটিপূর্ণ সিগারেটের কর কাঠামো এবং সিগারেটের প্যাকেটে এমআরপি উল্লেখ না করা নিয়ে গত ৭ বছরে ধরে বেশ কয়েকটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও গবেষণা তুলে ধরেছিলাম। একইসাথে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ নীতি নির্ধারকদের কাছে এ সংক্রান্ত আমার প্রতিবেদন ও গবেষণা কর্মগুলো নিয়ে আলোচনা করায় বেশ ইতিবাচক ফলাফল পেয়েছে বাংলাদেশ। যার মধ্যে উল্লেখ যোগ্য হলো, সিগারেটের প্যাকেটে বাধ্যতামূলকভাবে এমআরপি উল্লেখ ও এই দামে ভোক্তাদের কাছে বিক্রি করা । এবং শুধু দাম নয়, সিগারেটের কর ও দাম বাড়িয়ে সিগারেটের ব্যবহার কমিয়ে আনার পাশাপাশি সিগারেট কোম্পানির মুনাফা কমানোর এবারের উদ্যোগটি। যা এবার করেছে সরকার।
লেখক : তামাক নিয়ন্ত্রণ গবেষক ও বিশেষ প্রতিনিধি, একাত্তর টেলিভিশন sinhasmp@yahoo.com