খুচরা পর্যায়ে সরকার নির্ধারিত মূল্যের অধিক মূল্যে তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয়ে বাধ্য করছে তামাক কোম্পানিগুলো। ফলে সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব। এই বিষয়ের উপর গুরুত্বারোপ করে আজ ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, (বৃহস্পতিবার) সকাল ১১.৩০ টায় “বাজার সিন্ডিকেট একটি ষড়যন্ত্র; উদাহরণ- তামাক কোম্পানি” শীর্ষক একটি দক্ষতা বৃদ্ধিমূলক ভার্চুয়াল সভার আয়োজন করা হয়েছে।
রুরাল এসোসিয়েশন ফর নিউট্রিশন ইমপ্রুভমেন্ট (রানি)’র সিইও জনাব ফজলুল হকের সভাপতিত্বে সভায় বিশেষজ্ঞ আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট এর সমন্বয়কারী সাইফুদ্দিন আহমেদ, উবিনীগএর পরিচালক সীমা দাস সীমু, ভাইটাল স্ট্র্যাটিজিস এর কারিগরী পরামর্শক আমিনুল ইসলাম সুজন এবং ৭১ টিভির বিশেষ প্রতিনিধি সুশান্ত সিনহা। ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের প্রকল্প কর্মকর্তা মিঠুন বৈদ্য’র সঞ্চালনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএনটিটিপি এর প্রকল্প ব্যবস্থাপক হামিদুল ইসলাম হিল্লোল এবং ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (টিসিআরসি) এর প্রকল্প সমন্বয়ক ফারহানা জামান লিজা।
মূল প্রবন্ধসমুহে উল্লেখ করা হয়, মোড়কে উল্লেখিত সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যে সকল পর্যায়ে তামাকজাত দ্রব্য সরবরাহের আদেশ থাকলেও কোম্পানিগুলো এই নির্দেশনা মানছেনা। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্যমতে সরকার নির্ধারিত খুচরা মূল্যের চেয়ে খোলাবাজারে অধিক মূল্যে সিগারেট বিক্রয় হওয়ায় ভোক্তার পকেট থেকে প্রতিদিন প্রায় ২০ কোটি টাকা অতিরিক্ত চলে যাচ্ছে। ফলে সরকার প্রতিদিন রাজস্ব হারাচ্ছে প্রায় ১৩ কোটি ৬৮ লাখ টাকা এবং বছরে প্রায় ৫০০০ কোটি টাকা। এছাড়া অধিকাংশ ধোয়াবিহীন তামাক পণ্য উৎপাদনকারীদের লাইসেন্স না থাকা এবং পণ্যের মোড়কে ব্যান্ডরোলসহ মোড়কজাতকরণে প্রয়োজনীয় অন্যান্য তথ্যাদি না থাকায় রাজস্ব ফাঁকি দেবার সুযোগ পাচ্ছে। পাশাপাশি প্রবন্ধ উপস্থাপনায় স্ট্যান্ডার্ড প্যাকেজিং প্রবর্তন, ডিজিটাল ট্যাক্স ট্র্যাকিং ও ট্রেসিং সিস্টেম চালু, মোড়কের গায়ে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য যুক্তকরণ এবং কঠোর মনিটরিং ব্যবস্থা প্রবর্তনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়।
বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে ধোয়াবিহীন তামাক পণ্যের ব্যবহার বেশী হলেও এ থেকে প্রাপ্ত করের হার অত্যন্ত কম।ধোয়াবিহীন তামাক পণ্যের অনিয়ন্ত্রিত বাজার এর সুযোগে বিভিন্নভাবে তামাক কোম্পানি রাজস্ব ফাঁকি দেবার সুযোগ পাচ্ছে।এছাড়াও ধোয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্যে ভোক্তাকে আকৃষ্ট করতে স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্বক ক্ষতিকর বিভিন্ন সুগন্ধি ও কৃত্রিম রং ব্যবহার করা হয়। এক্ষেত্রে প্রশাসনের নজরদারীর পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করা জরুরী। এছাড়া বক্তারা, গণমাধ্যমে ধোয়াবিহীন তামাক বিষয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন লেখা, বাজার ভিত্তিক তথ্য নিয়ে গবেষণা ও গণমাধ্যমে প্রচার করা, সকল ধোয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য উৎপাদনকারীকে নিবন্ধনের আওতায় আনা এবং সংশ্লিষ্ট তথ্য এনবিআর বরাবর পাঠানোর বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।
বক্তারা আরো বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণের অভিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে তামাকের চাষ, তামাকের বাজার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ ও রাজস্ব ফাঁকির অনিয়ম রোধে সকল পর্যায় থেকে পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। এই লক্ষ্যে বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ে “এমআরপি” আইন সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে কিনা তা মনিটর করার পাশাপাশি তামাক নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত মোবাইল কোর্টে সংশ্লিষ্ট বিষয়টি যুক্ত করতে হবে। এছাড়া বক্তারা সংশ্লিষ্ট তথ্যগুলো জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও এনবিআর কর্মকর্তাদের সাথে শেয়ারের বিষয়েও গুরুত্বারোপ করেন।
বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের স্থানীয় সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়, সকল তামাক কোম্পানি, ডিলার, ও খুচরা বিক্রেতাদেরকে বাধ্যতামূলক লাইসেন্সিং ব্যবস্থার আওতায় আনা জরুরি।স্থানীয় পর্যায়ে সম্মিলিতভাবে এগিয়ে আসার মাধ্যমেই সামগ্রিকভাবে তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমকে শক্তিশালী করা সম্ভব। সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন ডাস, কাড়াপাড়া নারী কল্যাণ সংস্থা, প্রত্যাশা সামাজিক উন্নয়ন সংস্থা, সমন্বিত প্রমিলা মুক্তি প্রচেষ্টা, প্রশিক্ষিত যুব কল্যাণ সংস্থা, স্মরণী, সবুজ বাংলা গ্রামীন উন্নয়ন সংস্থা, সমাজ উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, পিডিএস, সাথী, কসমস, ডাস, অন্তরঙ্গ, সৃষ্টি সমাজ কল্যাণ সংস্থা, ডেভেলপমেন্ট ইফোর্ট বাংলাদেশ, অন্যচিত্র উন্নয়ন সংস্থা, পোভারটি ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামসহ বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের স্থানীয় বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিবৃন্দ।