ঢাকারবিবার , ১০ নভেম্বর ২০২৪

দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠছে ডেঙ্গু

প্রফেসর ডা: মো: আবিদ হোসেন মোল্লা
নভেম্বর ১০, ২০২৪ ১১:২১ পূর্বাহ্ণ । ১৭৮ জন

করোনা মহামারির মধ্যেই ডেঙ্গু রোগী বাড়তে শুরু করেছে। হাসপাতালগুলোয় এখন যে বাবা-মায়েরা শিশুদের জ্বর নিয়ে আসছেন, তাদের বড় একটা অংশের ডেঙ্গু ধরা পড়ছে। অনেক শিশুর ক্ষেত্রে তাদের শারীরিক অবস্থা জটিল আকার ধারণ করছে।

ডেঙ্গুর জটিলতা

কোভিড-১৯-এর মতো ডেঙ্গুও এক ধরনের ভাইরাসজনিত রোগ। তবে করোনাভাইরাস সরাসরি শ্বাসনালি দিয়ে মানুষের শরীরে ঢোকে। ডেঙ্গু ভাইরাস প্রবেশ করে এডিস মশার কামড়ে। বর্ষাকাল এই মশার ডিম পাড়ার মৌসুম। বাসাবাড়ি বা অন্য কোথাও জমে থাকা পানিতে বংশ বিস্তার করে এই মশারা। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার পর শরীরের রক্তনালিগুলোয় প্রদাহের সৃষ্টি হয়। ফলে রক্তনালি থেকে রক্তের জলীয় অংশ (প্লাজমা) বের হয়ে আসে। এতে রক্তচাপ কমে যায়।

এক পর্যায়ে মস্তিষ্কসহ শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোয় রক্ত সঞ্চালন কমে অক্সিজেনের তীব্র ঘাটতি তৈরি হয়। একই সঙ্গে রক্তের প্লাটিলেট ভাঙতে শুরু করে, শ্বেত কণিকা কমে যায়। রক্তে প্লাটিলেটের সংখ্যা আশংকাজনকভাবে কমে গেলে রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়ে। ডেঙ্গু ভাইরাস শরীরে প্রবেশের পর থেকে উপসর্গ দেখা দিতে ৫ থেকে ১০ দিন সময় লাগতে পারে।

উপসর্গ

ডেঙ্গুর উপসর্গগুলোকে মোটামুটি তিনটি পর্বে ভাগ করা যায়।

প্রথম পর্বে শিশুর বেশ উচ্চ মাত্রার জ্বর হয়। একই সঙ্গে মাথাসহ সারা শরীরে র‍্যাশ, বমি বমি ভাব বা বমি, চুলকানি, ক্ষুধামন্দা ইত্যাদি দেখা দেয়।

এ সময় কারও কারও নাক বা দাঁতের গোড়া দিয়ে রক্ত আসতে পারে। এ ধাপ সাধারণত ২-৭ দিন পর্যন্ত থাকে।

দ্বিতীয় পর্বের নাম সংকটপূর্ণ ধাপ। জ্বর কমে যাওয়ার পর পরই শুরু হওয়া এ ধাপে শিশুর তিনটি মারাত্মক সমস্যা দেখা দিতে পারে:

১. রক্তচাপ আশঙ্কাজনকভাবে কমতে শুরু করে।

২. শিশুর রক্তপাতের ঝুঁকি বেড়ে যায়। অনেক সময় ত্বকের নিচে রক্ত জমে যায়। এমনকি পায়খানা ও বমির সঙ্গে রক্ত যেতে থাকে।

৩. রক্তনালি থেকে বেরিয়ে আসা জলীয় ফুসফুসের চারপাশে এবং পেটের মধ্যে জমে শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়।

তৃতীয় পর্বের নাম পুনরুদ্ধার ধাপ। সংকটপূর্ণ ধাপ ভালোভাবে পার হওয়ার পর এ ধাপে আক্রান্ত শিশু ধীরে ধীরে সুস্থ হতে থাকে।

করণীয়

১. জ্বর হলে করোনার পাশাপাশি ডেঙ্গু পরীক্ষা করাতে হবে।

২. জ্বর কমাতে প্রয়োজনীয় মাত্রার প্যারাসিটামল দিতে হবে।

৩. তরল খাবার, যেমন পানি, শরবত, ডাবের পানি একটু বেশি দিতে হবে। তবে সবচেয়ে জরুরি আক্রান্ত শিশুকে প্রতিদিন ১-২ প্যাকেট খাওয়ার স্যালাইন খাওয়ানো।

৪. খাবার বরাবরের মতোই দিতে হবে। তবে জোরাজুরি করা চলবে না। শিশুকে প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার, যেমন ডিম, ডাল, মাছ, মাংস এবং ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার, যেমন কমলালেবু বা মাল্টার রস একটু বেশি দিন।

৫. শিশুর প্রস্রাবের পরিমাণের দিকে খেয়াল রাখতে হবে, পেশাব কমে যাচ্ছে কীনা।

৬. উপসর্গ দেখা দিলে দেরি না করে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।

৭. মশার বংশ বিস্তার রোধে আর শিশুকে মশার কামড় থেকে রক্ষা করতে প্রয়োজনীয় সবকিছুই যেমন টবে বা যেখানে সেখানে পানি জমা বন্ধ করার পাশা- পাশি শিশুকে মশার কামড় থেকে রক্ষা করবার জন্য মশারী ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

নোট: শিশু বিশেষজ্ঞ অধ্যপক ডা: মো: আবিদ হোসেন মোল্লার লিখিত ‘শিশু স্বাস্থ্যের খুঁটিনাটি’ বই থেকে নেওয়া হয়েছে তাঁর অনুমতিক্রমে।