ঢাকাবুধবার , ১৬ আগস্ট ২০২৩

ধোঁয়াবিহীন তামাক বাজারে চলছে স্বেচ্ছাচার

রোকেয়া বেগম ও সাইদা আখতার কুমকুম
আগস্ট ১৬, ২০২৩ ২:৪৭ অপরাহ্ণ । ১৭০৩ জন

তামাক বিরোধী নারী জোট (তাবিনাজ) এর নিয়মিত বাজার পর্যবেক্ষণের অংশ হিশেবে ঢাকা তিনটি বাজারে ১১ থেকে ২০ জুলাই, ২০২৩ সালের প্রথম সপ্তাহে একটি সংক্ষিপ্ত পর্যেক্ষণ করা হয়। এই তিনট বাজার হচ্ছে মোহাম্মদপুর টাউন হল মার্কেট, কৃষি মার্কেট ও কাওরান বাজার। এসব মার্কেটে জর্দার দোকান রয়েছে নামসহ এবং নাম ছাড়া। তিনটি বাজারে ১৭টি দোকান থেকে ৩৪ ব্রান্ডের জর্দা সংগ্রহ করা হয়েছে। দেখার বিষয় ছিল, আইন অনুযায়ি তথ্য কৌটায় আছে কিনা। এই তথ্যগুলো হচ্ছে ওজন , দাম, কোম্পানির ঠিকানা, কৌটার দাম ও বিক্রির দামের সাথে মিল আছে কিনা, মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ এবং বাজেটে কররোপের পর নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি হচ্ছে কিনা।

দোকানে পাওয়া যে ৩৪টি ব্রান্ডের জর্দা নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে সেগুলো হচ্ছে:

১.ইজমা শোভা জর্দা,২.জাফরানী জর্দা ৯৯ ৩.রতন জর্দা ৪.বাবা জর্দা ৫.নোমান জর্দা ৬.ঢাকা জর্দা ৭.আলমের শাহাজাদী কুন্ড জর্দা ৮.নাঈম পাতি জর্দা ৯.গুরুদেব জর্দা ১০.খানপুর জর্দা ১১.হাকিমপুরী জর্দা ১২.নুরানী রেডলিফ ১৩.নুরানী শাহাজাদি ১৪ ইজমা হেনাপতি ১৫.দুলাল পাতি জর্দা ১৬.মনিপুরী জর্দা১৭.মহিউদ্দিন জর্দা১৮ নোমান পাতা জর্দা ১৯.তাজ পাতি জর্দা ২০.গোপাল জর্দা ২১.বউ জর্দা ২২.ইজমা শোভা জর্দা (প্যাকেট )২৩.ইজমা ভিজা পাতি ২৪. ঈগল জর্দা ৫০১ ২৫.বউ শাহাজাদী জর্দা (প্যাকেট) ২৬.নুর মুরুব্বী জর্দা গোলাপী পাতি (প্যাকেট)২৭.বাবা জর্দা গোলাপী পাতি (প্যাকেট)২৮.শিল্পী স্পেশাল জাফরানী জর্দা ৯৯-১৯ নং ২৯.বাবুল পান পরাগ ৩০.আদি ভিজা পাতা জর্দা ৩১.মামুন রতন পাতি জর্দা ৩২.ব্যাট ওয়ান মামুন বাবা জর্দা গোলাপী পাতি ৩৩.অন্তর মুখী সাদা শোভা জর্দা (প্যাকেট)৩৪.মিষ্টি পাউডার চমন বাহার।

কোন ওজন উল্লেখ নাই এমন ব্রান্ড আছে ১৪টি (৪১%) । এগুলো হচ্ছে

১.আলমের শাহাজাদী কুন্ড জর্দা ২.খানপুর জর্দা ৩.নুরানী রেডলিফ ৪.নুরানী শাহাজাদি ৫.দুলাল পাতি জর্দা ৬.মনিপুরী জর্দা৭.মহিউদ্দিন জর্দা ৮.নোমান পাতা জর্দা ৯.বউ জর্দা ১০.ইজমা ভিজা পাতি ১১.বউ শাহাজাদী জর্দা (প্যাকেট)১২ শিল্পী স্পেশাল জাফরানী জর্দা ৯৯ ১৯ নং ১৩.মামুন রতন পাতি জর্দা ১৪.অন্তর মুখী সাদা শোভা জর্দা (প্যাকেট)।

এই কৌটাগুলোর সাইজ বিভিন্ন ধরণের, ৩৪ টি ব্যান্ডের মধ্যে ২০ টি  কৌটায় গ্রাম উল্লেখ রয়েছে। এ ২০ কৌটায় আবার ১২ ধরণের ওজন  পা্ওয়া যায়।  যেমন  ৫, ১০,১৫,২০, ২৫,৩০,৫০,৬০,৮০ এবং ১০০ গ্রাম।

এখানে ব্র্যান্ডের  সংখ্যা ২৭ টি।

১.ইজমা হেনাপতি ২.গুরুদেব জর্দা ৩. নোমান জর্দা ৪. ইজমা শোভা জর্দা ৫. ঢাকা জর্দা ৬. জাফরানী জর্দা ৯৯ ৭.তাজ পাতি জর্দা ৮.নুর মুরুব্বী জর্দা গোলাপী পাতি ৯.বাবা জর্দা গোলাপী পাতি প্যাকেট ১০. ইজমা শোভা জর্দা ১১.বাবা জর্দা ১২.মিষ্টি পাউডার চমন বাহার ১৩.জাফরানী জর্দা ৯৯ ১৪.ঈগল জর্দা ৫০১ ১৫. ইজমা শোভা জর্দা ১৬.জাফরানী জর্দা ৯৯, ১৭.নাঈম পাতি জর্দা ১৮. হাকিমপুরী জর্দা ১৯.গোপাল জর্দা ২০.বাবুল পান পরাগ ২১. জাফরানী জর্দা ৯৯ ২২. ব্যাট ওয়ান মামুন বাবা জর্দা গোলাপী পাতি ২৩. ইজমা শোভা জর্দা ২৪.রতন জর্দা ২৫.বাবা জর্দা ২৬.হাকিমপুরী জর্দা ২৭.জাফরানী জর্দা ৯৯

মোট ২০টি (৫৯%) ব্রান্ডের ১২ ধরণের ওজন, সর্ব নিম্ন ৫ গ্রাম থেকে সর্বোচ্চ ১০০ গ্রামের কৌটা পাওয়া গেছে। তবে বেশির ভাগ ১০ থেকে ২৫ গ্রামের মধ্যে আছে । দুএকটি ৫০ থেকে ৮০ গ্রাম পর্যন্ত ওজন লেখা আছে । করারোপের সময় শুধুমাত্র ১০ গ্রামের কথা উল্লেখ করা হয়, অথচ ১২ ধরণের ওজনের মধ্যে ১০ গ্রাম ওজন পাওয়া গেছে মাত্র ৩ টি (২৫%), একইভাবে ২০ গ্রাম (২৫%), ২৫ গ্রাম ২৫% ব্রান্ডে পাওয়া গেছে। অর্থাৎ করারোপের সময় যে ওজন নির্ধারণ করয়ে দেয়া হয়েছে তার সাথে বাজারের বাস্তবতার কোন মিল নাই। ১০ গ্রাম ওজনের ব্রান্ডগুলো হচ্ছে গুরুদেব জর্দা , নোমান জর্দা , ইজমা শোভন জর্দা। এই জর্দাগুলো বাজারে ৪৫ টাকায় বিক্রি হবার কথা কিন্তু এগুলো বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ১২ টাকায়।

উল্লেখযোগ্য হচ্ছে জর্দার কৌটায় সঠিকভাবে দাম লেখা এবং বিক্রির ক্ষেত্রে চলছে আর একধরণের স্বেচ্ছাচারিতা। ৩৪টি ব্রান্ডের ২৬টি (৭৬%) কৌটার গায়ে কোন দাম লেখা নাই। বাকী ১২ ব্রান্ডের জর্দা বিভিন্ন ওজনে ও দামে বিক্রি হচ্ছে। এবং সেখানে রয়েছে কৌটার দাম এবং বিক্রির মূল্য এক নয়। এবং কৌটার গায়ে যে দাম আছে তার চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করছে। কয়েকটি উদাহরণ ইজমা হেনাপতি ৫ গ্রাম, কৌটার গায়ের মূল্য ১৭ টাকা, নিক্রি হচ্ছে ২০টায়। নোমান পাতা জর্দা ১০ গ্রাম গায়ের মূল্য ১০ টাকা বিক্রি করছে ১২ টাকা। হাকিমপুরী জর্দা ৫০ গ্রাম, গায়ের মূল্য ১৬০ টাকা, বিক্রি হচ্ছে ১৭৫ টাকা। বাবা জর্দা ২০ গ্রাম, গায়ের মূল্য ৬ টাকা, বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকায় ইত্যাদী। যদিও জর্দার ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে হলে দাম বাড়ানো একটা অন্যতম প্রধান উপায়, কিন্তু সেই দাম বাড়ানোটা এমন পর্যায়ের হতে হবে যেন সরকার রাজস্ব পায় এবং একই সাথে দাম ক্রেতার নাগালের বাইরে চলে যায়। এই কৌটার গায়ে লেখা দামের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করছে তা এতো বেশি নয় যে ক্রেতা আর কিনবে না,বরং বিক্রেতার সুবিধা হয় বলে সে ক্রেতাকে কেনার জন্যে বেশি উৎসাহী থাকবে। গরিব এবং নারী ক্রেতারা কৌটার গায়ের দাম দেখে কেনে না।বিক্রেতা যে দাম বলে সে দামই দেয়।

চৌদ্দটি ব্রান্ড (৪১%) কোন ওজন বা দাম না লিখেই কৌটা দেখিয়েই নিজের মতো করে দাম নিচ্ছে। এগুলো যেমন কম দামে ১০ টাকায় ও বিক্রি হচ্ছে তেমনি বড় কৌটা ১১০ টাকায়ও হচ্ছে। এর উদাহরণ গুলো হচ্ছে রতন জর্দা,নুরানি রেড লিফ,দুলাল পাতি জর্দা,ইজমা ভিজা পাতি ইত্যাদী।

উৎপাদনের তারিখ আছে ২৩টি ব্রাণ্ডের (৬৭%), মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ আছে ৬৭% ।যেসব ব্রান্ডের উৎপাদনের তারিখ আছে তাদের মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ ও আছে, যাদের উৎপাদনের তারিখ নাই তারা মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ ও মানেন নাই। এম কাদের ঈগল টোবাকো কোম্পানীর ঈগল জর্দা ৫০১ কৌটার গায়ে মেয়াদ উত্তীর্নের তারিখ ২০২২ লিখা আছে কিন্তু এখনো বাজারে বিক্রি হচ্ছে। মোহম্মদপুর কৃষি মার্কেটে এটা পা্ওয়া গেছে।

কোম্পানিগুলো ঠিকানা ঠিকমতো দেয় না । ৩৪টি ব্রান্ডের মধ্যে মাত্র ৬টিতে (১৭%) নির্দিষ্ট ঠিকানা আছে। যেমন নুর মোহাম্মদ কেমিকাল কোম্পানি, ৩২১ মীর হাজারীবাগ, ঢাকা, ১২টিতে (৩৫%) শুধু জেলার নাম যেমন নারায়ণগঞ্জ, বাকী ১৬টিতে (৪৭%) কোন ঠিকানার জায়গায় কিছু লেখা নাই। অর্থাৎ এই কোম্পানিগুলোকে এনবিআর বা অন্য কোন সরকারি প্রতিষ্ঠান কোন নজরদারীতে আনতে পারবে না ।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের উদ্যোগে তামাক বিরোধী নারী জোট (তাবিনাজ) ধোঁয়াবিহীন তামাকের এই সকল জরুরি বিষয় নিয়ে একটি কৌশল পত্র তৈরির কাজে যুক্ত ছিল,যা মন্ত্রণালয়ে পাশ হয়েছে ২০২০ সালে, ১০ জানুয়ারী ২০২১ সালে বাস্তবায়িত হ্ওয়ার কথা।অথচ জর্দার বাজারের স্বেচ্ছাচারিতা চলছেই।

 

তথ্য সংগ্রহ করেছেন : রোকেয়া বেগম

প্রতিবেদন লিখেছেন : সাইদা আখতার কুমকুম