জন্মের পরপরই শিশুর সুস্থতার, নিরাপত্তার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রথম ধাপ হচ্ছে শিশুকে মাতৃদুগ্ধ পান করানো। দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের দেশে এই মাতৃদুগ্ধের মতো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি আজও ভীষণভাবে অবহেলিত। একজন মাকে তাঁর নবজাতক সন্তানকে মাতৃদুগ্ধ দিতে শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রস্তুত করানোর দায়িত্ব পরিবারের সদস্যদের।
শিশুজন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে মাতৃদুগ্ধ পান করাতে হবে এবং প্রথম ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শুধু বুকের দুধই খাবে। এ সময় প্রয়োজনীয় ওষুধ ছাড়া এক ফোঁটা পানিও দেওয়া যাবে না। ছয় মাস বয়সের পর থেকে দুই বছর বয়স পর্যন্ত বুকের দুধের পাশাপাশি বাড়িতে তৈরি স্বাভাবিক খাবার দিতে হবে শিশুকে।
ছয় মাস বয়সের পর থেকে দুই বছর বয়স পর্যন্ত বুকের দুধের পাশাপাশি বাড়িতে তৈরি স্বাভাবিক খাবার দিতে হবে শিশুকে।
মাতৃদুগ্ধ কেন এত গুরুত্বপূর্ণ
মায়ের দুধে শিশুর বেড়ে ওঠার সব উপাদান যেমন আমিষ, চর্বি, ভিটামিন, রোগপ্রতিরোধকারী উপাদান, পানি, সহজপাচ্যকারী উপাদান ইত্যাদি সুষমভাবে থাকে। এতে একজন মায়ের বুকের দুধ খাওয়া শিশু সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হয়ে বেড়ে ওঠে। পাশাপাশি এসব শিশুদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতাও অনেক বেশি থাকে। এর ফলে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, অপুষ্টিজনিত সমস্যা থেকে রক্ষা পায়। কমে শিশুমৃত্যুর হার।
শিশুর মানসিক বিকাশেও মায়ের দুধের ভূমিকা অনবদ্য। শুধু তা-ই নয়, মায়ের দুধের মাধ্যমে মা ও শিশুর মধ্যকার চিরাচরিত বন্ধন আরও দৃঢ় হয়। এ ছাড়া মায়ের সুস্থতা যেমন স্তন ক্যানসার, ওভারিয়ান ক্যানসার প্রতিরোধে মায়ের দুধের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
কৃত্রিম শিশুখাদ্যে লালিত শিশুদের বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি, মৃত্যুহারের ঝুঁকি মায়ের দুধে লালিত শিশুর চেয়ে অনেক অনেক বেশি। মাতৃদুগ্ধ পরিবারের খরচ ও সময় দুটোর সাশ্রয় করে থাকে।
পরামর্শ
মায়ের দুধ খাওয়ানো নিয়ে মায়ের কিছু ভুল ধারণা থাকে, যার মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত ধারণা হলো বাচ্চা পর্যাপ্ত দুধ পায় না। আসলে প্রায় সব মায়ের শরীরে তাঁর শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় মাতৃদুগ্ধ তৈরি হয়। সমস্যা দুধ খাওয়ানোর নিয়মে।
শিশুকে কতখানি সঠিকভাবে মায়ের বুকে সংযুক্ত করা গেল, কত ঘন ঘন দুধ খাওয়ানো হচ্ছে এবং শিশুটি প্রতিবার কত ভালোভাবে মায়ের বুকের দুধ টেনে খেতে পারছে, এসবের ওপরও মাতৃদুগ্ধ তৈরির বিষয়টি নির্ভর করে। শিশুকে দুধ খাওয়ানো শুধু মায়ের একার কাজ নয়; এ ক্ষেত্রে সবার সহযোগিতা দরকার।
যেমন স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের কাছ থেকে নিয়মিত পরামর্শ, বাসায় অন্যদের থেকে সহযোগিতা এবং যথেষ্ট পরিমাণে পুষ্টিকর খাবার ও পানি পানের মাধ্যমে এ সমস্যা থেকে উদ্ধার সম্ভব। একজন শিশু যদি ২৪ ঘণ্টায় পাঁচ-ছয়বার প্রস্রাব করে, তা হলে বুঝতে হবে সে যথেষ্ট পরিমাণে বুকের দুধ পাচ্ছে।
মায়ের দুধের গুরুত্বকে সবার কাছে তুলে ধরতে ও এ বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করতে প্রতিবছর পৃথিবীর ১২০টির বেশি দেশে ১ থেকে ৭ আগস্ট বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ পালন করা হয়। কারণ, এই অতীব জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি আজও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে অবহেলিত। আগামী দিনের ভবিষ্যৎ এই নবজাতক শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ মাতৃদুগ্ধের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাই সব বাধা উপেক্ষা করে ঘরে ঘরে ফর্মুলা বা কৃত্রিম শিশুখাদ্য পরিহার এবং মাতৃদুগ্ধকে নবজাতক শিশুর একমাত্র খাবার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।